Monday 14 June 2021

৪/ ডিম্ববাহী নালীদ্বয় :-

 ৪/ ডিম্ববাহী নালীদ্বয় :-

    জরায়ুর উপরিভাগের ফান্ডাস অংশের দুই প্রান্ত থেকে মনে যেখানে ফান্ডাস ও বডি মিলিত হয়েছে সেই অংশের দুই পাশ থেকে শিং- এর মত দুটি  লম্বা ও সরু নালী বেরিয়ে ডিম্বাশয় দুটির সামনে ডালপালা ছড়িয়ে আছে, তাদের বলে ডিম্ববাহী নালী বা ফ্যালোপিয়ান টিউব বা কালল নল । 

    এখানে জেনে রাখা দরকার যে, জরায়ুর দুপাশ দিয়ে এবং দু'পাশের দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের তলা দিয়ে অনেকটা বাদুড়ের পাখনার মতন দেখতে পেরিটোনিয়াম পর্দা দিয়ে তৈরী যে ব্রড লিগামেন্ট বা চওড়া বন্ধনী বের হয়ে এসে পেলভিসের দুই পাশের দেওয়ালে যুক্ত থাকে সেই বন্ধনী জরায়ুকে দুই পাশ দিয়ে ট্নে বস্তি গহ্বরেররে সাথে আটকে রাখে । এই ব্রড লিগামেন্টের  যে অংশ দ্বারা ইউটারিন যুক্ত থাকে তাকে বলে মেসোস‍্যলপিংক্স আর যে অংশ দ্বারা জরায়ু আটকে থাকে তাকে বলে মেসোমেট্রিয়াম এবং যে অংশ দ্বারা ডিম্বাশয় দুটি আটকানো থাকে তাকে বলে মেসোওভারিয়াম ।

    প্রতিটা ফ্যালোপিয়ান টিউব প্রায় 3 থেকে 4 ইঞ্চি লম্বা এবং 1/4 ইঞ্চির মত মোটা । এই ফ‍্যালোপিয়ন টিউবের একদিকে প্রান্ত বা এক দিকের মুখ জরায়ুর সাথে যুক্ত এবং এই মুখটি খুব সরু হয় । নলের অন্য মুখ খোলা থাকে এবং সেই মুখ দিয়ে পেরিটোনিয়াম ক্যাভিটিতে এসে উনমুক্ত হয়েছে । অর্থাৎ খোলা অন্য মুখটি পেরিটোনিয়াম গহ্বরে থেকে ।  এই খোলা দিকের প্রান্তটি ফানেলের মত প্রসারিত । সরু সরু  অনেকগুলো অংশ এই মুখের চারপাশ থেকে বেরিয়ে ফানেল বা ঝালরের মতন প্রসারিত হয়ে পেরিটোনিয়াম ক‍্যাভিটিতে ঝুলে থাকে । এই ভাবে খোলা প্রান্তটি বড় অপসারিত হয়ে থাকার ফলে ডিম্বকোষ থেকে বের হওয়া ডিম্বাণু সহজেই ঢুকে পড়তে পারে ।  ফ্যালোপিয়ান টিউবের  এই ফানেল বা ঝালরের  মত অংশটি কে বলে ফিমব্রীয়েটেড এন্ড । এই ফানেলের মত অংশ অংশের উপরে অর্থাৎ চওড়া  অংশকে বলে  Ampula, এবং ফ‍্যালোপিয়ান টিউবের যে সরু অংশ গিয়ে জরায়ুতে যুক্ত হয়েছে তাকে বলা হয় Isthmus বা যোজক ।




Tuesday 8 June 2021

৩/ ডিম্বকোষ দায়ী :-

 ৩/ ডিম্বকোষ দায়ী :-


    মহিলাদের তলপেটে কাছে জরায়ুর দু'পাশে দুটি টিউবের তলায় অবস্থান করে দুটি ডিম্বকোষ, একটি জরায়ুর বামদিকে ও অন্যটি থাকে ডানদিকে । ডিম্বকোষ দুটি কিন্তু ফ‍্যালোপিয় টিউব এর সাথে যুক্ত থাকে না । ব্রড লিগামেন্ট দিয়ে তারা আবদ্ধ এবং ফ্যালোপিনিয়ন টিউবের তলায় গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে । এছাড়া ওভারি লিগামেন্ট নামে এক রকম গোলাকার শক্ত ফাইব্রাস টিস্যুর বন্ধনী দিয়ে এই দুটি জরায়ুর  সাথে যুক্ত থাকে । ডিম্বাকৃতি বা ছোট বাদামের মত আকৃতি বিশিষ্ট মুক্ত বর্ণের দেখতে এই ওভারি প্রতিটি লম্বায় প্রায় এক ইঞ্চির কিছু বেশি ও চওড়া প্রায় আধ ইঞ্চির সামান্য বেশি হয়ে থেকে । ওভারির এক প্রান্ত ফ্যালোপিয়ান টিউবের ফিমব্রিয়েটেড  এন্ড বা ঝালরের মতন অংশের দিকে থাকে ও অন‍্য প্রান্ত লিগামেন্ট অফ ওভারি দ্বারা যুক্ত থাকে । ওভারি ও জরায়ুর মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা হচ্ছে ফ্যালোপিয়ান টিউব । যে কোনো একটি ওভারী থেকে প্রতি 28 দিন অন্তর একটি করে পরিপক্ক ডিম্বাণু ক্ষরণ হয়ে পেরিটোনিয়াম গহ্বরে পড়ে । যে দিকের ডিম্বাশয় থেকে ডিম ক্ষরণ হয় সেই দিকের ফ‍্যালোপিয় টিউব তার ঝালরের মত মুখ দিয়ে সেই ডিম্বাণুকে  ধরে নিয়ে নিজের নালীতে ঢুকিয়ে দেয় । টিউবের মধ্যে চুলের মতন অসংখ্য সিলিয়া থাকে এবং এই সিলিয়া গুলি ডিম্বানুকে ঢেউয়ের মতন তাড়িয়ে জরায়ুর মধ্যে নিয়ে যায় । ফ্যালফ্যাল টিউবের প্রধান কাজ হচ্ছে ডিম্বাণু কে এগিয়ে এনে জরায়ুর মধ্যে ফেলে দেওয়া । আবার এই নালিপথে শুক্রকীট ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটে সেটি নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড  হয় অর্থাৎ ভ্রূণের প্রথম অংকুরের জন্ম হয় বা গর্ভধারণ ঘটে ।

 

   ডিম্বাশয়ের কাজ:- পুরুষের যৌন গ্রন্থি যেমন তাদের দুটি অণ্ড গন্থি বা টেস্টিস, তেমনি মহিলাদের যৌন গ্রন্থি হচ্ছে এই দুটি ডিম্বকোষ । পুরুষদের যৌন গ্রন্থির কাজ যেমন শুক্তকীট বা Sperm cell ও পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি করা তেমনি মহিলাদের ওভারির কাজ হচ্ছে  স্ত্রী যৌন হরমোন ও ডিম্বাণু তৈরি করা । ওভারি থেকে দুই ধরনের হরমোন ক্ষরণ হয়, যথা এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন । এস্ট্রোজেন বা ইস্ট্রোজেনিক হরমোনের মধ্যে এস্ট্রাডিওল হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও খুব সক্রিয় এস্ট্রোজেন হরমোন যা প্রাকৃতিক ভাবে ওভারিয়ান ফলিকল থেকে তৈরি হয় এবং যা এ্যণ্টিরিয়ার পিটুইটারি গোনাডোট্রফিন্সের নির্দেশমতো তৈরি হয় । অন্যান্য ন্যাচারাল এস্ট্রোজেন হচ্ছে এস্ট্রোন এবং এস্ট্রিওল । অবশ্য এস্ট্রিওলটি হচ্ছে দুর্বল ধরনের এস্ট্রোজেন যা এস্ট্রাডিওল ও এস্টোনের মেটাবলিক প্রোডাক্ট রূপে দেহে তৈরি হয় এবং তা মূত্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বিশেষ করে গর্ভবতীদের মূত্রে । প্রোজেস্টেরন বা প্রজেট্রোজেন বা প্রজেস্ট্রোজেনিক হরমোনের মধ্যে প্রোজেস্টেরন হচ্ছে মুখ্য প্রোজেস্টেরন হরমোন, যা কর্পাস লুটিয়াম থেকে তৈরি হয় এবং গর্ভবস্থাই প্লাসেন্টা থেকেও এটি তৈরি হয় । পিউবার্টি বা যৌবন আগমনের সাথে সাথে             মহিলাদের এই যৌনগ্রন্থি অর্থাৎ ওভারি সক্রিয় হয়ে উপরোক্ত দুটি  যৌন হরমোন ও ডিম্বাণু তৈরি শুরু করে দেয়  । এই সময় এই যৌন হরমোন এর প্রভাবে মহিলাদের দেহে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে অর্থাৎ সেকেন্ডারি সেক্স ক্যারেক্টার বা স্বাভাবিক যৌন চরিত্রের বিকাশ ঘটে । এই হরমোনের প্রভাবে প্রধানত এস্ট্রোজেনের প্রভাবে মহিলাদের জনন যন্ত্রগুলি সক্রিয় বা উজ্জীবিত হয়ে নিয়মিত ঋতুস্রাব হতে থাকে । এছাড়া স্তন, যৌনাঙ্গ, প্লাসেন্টা, গর্ভ প্রভৃতি পুষ্টি সাধন ও নিয়ন্ত্রণ হরমোনের প্রভাবে ঘটে । গর্ভ সংক্রান্তঃ কাজে অবশ্য প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা বেশি দেখা যায়, তাই এই সময় এই হরমোনটির কর্মতৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে ।স্ত্রী জনন যন্ত্রের সম্পূর্ণ ক্রিয়া-কলাপেরর ক্ষেত্রে এই দুই যৌন হরমোনের  যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে । এই যৌন হরমোনের ক্ষরণ ও ক্রিয়া-কলাপ এবং ওভারির গঠন ও কার্য  আবার এ্যণ্টিরিয়ার ও পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের গোনাডোট্রপিক হরমোন গুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । এই হরমোন দুটি হচ্ছে FSH ও  LH .

    প্রতিটি ডিম্বকোষে কয়েক লক্ষ্য ডিম্বাণু থাকে । তবে শৈশব বা বালিকা অবস্থায় এইসব ডিম্বাণু অপরিনত, অপরিপক্ক অবস্থায় থাকে । অপক্ক ডিমকে Oocyte  বলে ।

    মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক ঋতুস্রাবের সময় থেকে এইসব ওভাম পরিণত হতে থাকে । মেয়ে শিশুর জন্মের সঙ্গে তার উদরে থাকা ওভারির মধ্যে লাখ লাখ অপক্ক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় । মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মেয়ের ভ্রূণের কুড়ি থেকে বাইশ সপ্তাহ বয়সে তার ডিম্বাশয় দুটির মধ্যে  পঞ্চাশ, ষাট লক্ষ থেকে 2 কোটি পর্যন্ত ও ডিম্বাণুর জন্মে যায় । এই ডিম্বাণু গুলি প্রতিটি একটি করে ফলিকল বা রস পূর্ণ থলির মধ্যে অবস্থান । তবে এই লাখ লাখ ফলিকলের বেশিরভাগই ঠিকমতো তৈরি হতে বা বাড়তে পারে না বলে গর্ভে থাকাকালীন মেয়ে ভ্রূণের বেশিরভাগ ডিম্বাণু ক্রমে নষ্ট হয়ে যায় এবং জন্মের সময় তার ওভারিতে তখন পনেরো কুড়ি লক্ষ অপক্ক ডিম্বাণু থাকে । আবার এর মধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ ডিম্বাণু কাল ক্রমে নষ্ট হয়ে গিয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময় ওভারির মধ্যে দুই থেকে চার লক্ষ  ডিম্বাণু  অবশিষ্ট থাকে ।

    ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বাণু গুলি যে রসপূর্ণ থলির মধ্যে আবদ্ধ থাকে সেই থলি কে বলে শিশু ফলিকল বা আদি ফলিকল বা Primordial follicle । প্রতিটি Primordial follicle-এর দেওয়ালে একটি করে ডিম্বাণু সুপ্ত ও অপক্ব অবস্থায় গাঁথা থাকে । পিটুইটারি গ্রন্থির এ্যণ্টিরায়ার লেবের গোনাডোট্রপিক হরমোনের  প্রধানত FSH  বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবে প্রতি মাসিক ঋতুচক্রে যথাসময়ে একটি করে প্রাইমোরডিয়াল ফলিকল ও তার ভেতরকার ডিম্বাণু বৃদ্ধি পায় এবং পরিপুষ্ট  হয়ে যে অবস্থা প্রাপ্ত হয় তাকে ওভারিয়ান ফলিকল বা গ্রাফিয়ান ফলিকল বলে । গোনাডোট্রপিক হরমোনের প্রভাবে গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে এস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণ হয় ‌।                 

  মহিলাদের  পিরিয়ডের অর্থাৎ ঋতু চক্রের শূরুর সময় থেকে তাদের ওভারিতে দুই থেকে চার লাখ মত অপক্ক ডিম্বাণু থাকে, কিন্তু একজন নারীর সমগ্রহ ঋতুকালে বয়ঃসন্ধিতে মাসিক স্রাব আরম্ভের সময় থেকে পৌঢ়ত্বের  ঋতুবন্ধ পর্যন্ত সময়কালে কেবল মাত্র 300 থেকে 400 টি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে এবং বাকি অসংখ্য ডিম্বাণু শিশু অবস্থাতেই নষ্ট হয়ে মিলিয়ে যায় । একজন মহিলার জীবনে 300 থেকে 400 বার ওভুলেশান ঘটে অর্থাৎ তাঁর সমগ্র সন্তান জন্মদান জীবনে 300 থেকে 400 বার ঋতুস্রাব হওয়া । সাধারণ প্রতিটি ঋতুচক্রে একটি করে ডিম্বাণুর স্ফুটন হয় অর্থাৎ একটি ডিম্বাণু ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে । এর মধ্যে যে ক'টি শুক্রকীটের সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্ভাধান ঘটে সেই ক'টি ছাড়া আর সব গুলোই জরায়ুতে আসার পর মৃত অবস্থায় এক এক করে যথা সময়ে মাসিক ঋতুস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় । দুটি ডিম্বকোষের মধ্যে কখনো ওপাশের কখনো এপাশের  ডিম্বকোষ থেকে ডিম্বাণু নির্গমন ঘটে । যে পর্যন্ত না ডিম্বাণু গুলি ওভাম থেকে মুক্ত হয় সেই পর্যন্ত তারা Primordial follicle-এ সুপ্ত অবস্থায় থাকে তবে দেহের সেল গুলি বা জীব কোষদেহের মধ্যে যেমন প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক ভাঙ্গা গড়ার কাজ চলে ফলিকলের মধ্যে আবদ্ধ ঐ ডিম্বাণুর মধ্যে সেই রকম কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলে না, তাই মহিলাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিম্বাণু গুলির  ক্ষয় ক্ষতির সংখ্যা ও বাড়ে । এই কারণে মহিলাদের বেশি বয়সে গর্ব হলে সন্তানের মধ্যে জেনেটিক অস্বাভাবিকতার সম্ভাবনা বেশি থাকে  বলে দেখা গেছে ।

     মহিলাদের পিউবার্টি  বা বয়ঃসন্ধিকালে ওভারি নিঃসৃত হরমোনের অভাব হলে যৌন যন্ত্রগুলি স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও নারী দেহে সেকেন্ডারি সেক্স ক্যারেক্টার বা যৌবনের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে না । জনন যন্ত্র দুর্বল ও শিশু অবস্থায় রয়ে  যায় এবং দেহ ও মনের বিকাশের ও থেমে যায় । যদি একটি ডাম্বাশয় বিকল্প নষ্ট হয়ে যায় তবে অন্যটি সাহায্যে কাজ চলে যায় কিন্তু মহিলাদের  যদি দুটি ওভারি  বা ডিম্বাশয় নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেক্স হরমোনের অভাবে প্রিম্যাচিওর মনোপজ হয়ে জননতন্ত্র অকালে দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যায়, ঋতুস্রাব হয় না বা গর্ব হয় না এবং দৈহিক ও মানসিক নানা লক্ষণ দেখা দেয় যা সারণত মহালাদের স্বাভাবিক মনোপজ-এর পর দেখা যায় । তবে একটি ওভারি সক্রিয় বা ভালো  থাকলে ঋতুস্রাব ও গর্ব  হবে ।











Saturday 29 May 2021

জরায়ুর স্থানচ্যুতি কারণ :-

  জরায়ুর স্থানচ্যুতি কারণ :-



    নানা কারণে জরায়ুর স্থানচ্যুতি হতে পারে, যেমন কষ্টকর প্রস্তাব, প্রস্রাবের পর ভারী কোনো জিনিস তোলা নামা করা বা বেশি পরিশ্রম করা অথবা পড়ে গিয়ে তলপেটে আঘাত কিংবা বার বার গর্ভপাত হওয়া, প্রস্রাবের ঠিক পরেই গর্ভবতী হওয়া,  হঠাৎ উঠে বসা বা দাঁড়ানো, যৌন মিলনের সময় জরায়ূতে আঘাত পাওয়া, বিশেষত কাঁচা পোয়াতি অবস্থায় অর্থাৎ প্রসবের পর যাদের জরায়ুর তখনও স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি এমন অবস্থায় মিলিত হলে জরায়ুর স্থানচ‍্যুতি ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় ।  এছাড়া বাহ্য প্রস্রাবের সময় বার বার বেশি চাপ বা কোঁথ দেওয়া বা জরায়ুর সংক্রান্ত নানা রকম রোগ যেমন এণ্ডোমেট্রাইটিস, জরায়ুর টিউমার ইত্যাদি কারণে জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তন হয় । এছাড়াও গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধির সাথে সাথে তার সঙ্গে সংলগ্ণ বন্ধনী ও পেশী গুলিতে টান পড়ে সেগুলি অনেক বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের পর জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হবার সময় অর্থাৎ জরায়ুর গুটিয়ে স্বাভাবিক হবার সময় সংলগ্ণ বন্ধনী ও পেশীগুলি যদি ঠিকমতো সংকুচিত না হয়ে আগের মত অবস্থায় ফিরে না আসে ও ঢিলা থেকে যায় তাহলেও জরায়ুর ডিসপ্লেমেন্ট ঘটতে পারে । বিশেষত এই অবস্থায় যদি খাটাখাটনি বেশী করা বা আঘাত জনিত কোন ঘটনা ঘটে । অনেক সময় বহু সন্তানবতীদের জরায়ু ও তার লিগামেন্ট বা বন্ধনী গুলি স্থায়ীভাবে শিথিল হয়ে পড়ে ফলে এ ক্ষেত্রে স্থানচ্যুতি এড়ানো যায় না ।

    রেট্রোভার্সান, রেট্রোফ্লেক্সান এবং প্রোল‍্যান্স প্রকারের স্থানচ‍্যুতি সাধারণত সন্তানবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষকরে বহু সন্তানবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে । তবে জন্মগতভাবেও কারো কারো রোট্রোভার্টড জরায়ু দেখা যেতে পারে । এছাড়াও কষ্টকর প্রসবের পর দীর্ঘদিন ধরে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে জরায়ু রেট্রোভার্সানের সম্ভাবনা থাকে । নিঃসন্তান বা কুমারী মেয়েদের রেট্রোফ্লেক্সান খুব কম হয় । প্রল‍্যান্স স্থানচ্যুতি অনেক সময় জরায়ুর রেট্রোভার্সান থেকেও হতে পারে । রেট্রভার্টেড ইউরিটাসে গর্ভসঞ্চার হলে অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এই অবস্থায় জরায়ু খুব বেশি শক্ত হয়ে ওঠে  এবং তখন তা নীচে রেক্টাম ও উপরের ব্লাডার কে চেপে ধরে,বা অবরোধের লক্ষণ প্রকাশ করে । এছাড়া রেট্রোভার্টেড় ইউটিরাস কেসে অন্যান্য আরো যেসব দুর্বল দেখা দেয় তা হল, ঋতুস্রাবের গোলমাল ঘটে । প্রতি মাসিকের সময় জরায়ুতে প্রচুর পরিমানে রক্ত আসে এবং সেই সময় রেক্টামে অবরোধ ঘটতে দেখা যায় । জরায়ু থেকে অত্যাধিক রক্তস্রাব হতে পারে । লিউকোরিয়া হতে পারে এছাড়াও কোমরে ও পিঠে বেদনা এবং অনেকের মাসিক বিকার দেখা দেয় । অনেক সময় এর থেকে জরায়ুর Prolapse  হতে পার ।


প্রসবের পর জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত :-     

       প্রসাবের পর জরায়ু আস্থে আস্থে সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে এবং ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে তার পূর্ব অবস্থায় তথা স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আসে । এই সময়কে Puerperium বলে । এই সময় সহবাস বা যৌন মিলন করা উচিত নয় ।এই সময় সহবাস করলে কাঁচা বা দুর্বল জরায়ুতে আঘাত লাগে তার স্থানচ্যুতি ঘটতে পারে ।  কুমারী  বা নিঃসন্তান মহিলাদের জরায়ু থেকে সন্তানবতী মহিলাদের জরায়ু প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং তার গহ্বরও আগের থেকে বড় হয়ে যায় । মহিলাদের শৈশবের জরাই ছোট এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে তবে বয়সন্ধি বা যৌবন আগমনের সাথে সাথে এটি বড় হয়ে স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং যৌন হরমোন এর প্রভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে । মনোপজের পর এবং বার্ধক্যে মহিলাদের জরায়ু শুকিয়ে ছোট হয়ে আসে । জরায়ুর মাঝে খাঁজ পড়ে  এবং এর মধ্যে রক্ত চলাচলও  কমে আসে যার ফলে সেটি ফ্যাকাশে দেখায় । অনেক সময় জরায়ুর গ্রীবার মুখবুজে যায় ।


জরায়ুতে নার্ভ ও রক্ত সরবরাহ:-

    ইউটারিন ধমনী নামক ইন্টার্নাল ইলিয়াক ধমনীর একটি প্রশাখা থেকে জরায়ুর মধ্যে রক্ত সরবরাহ হয় এবং এটি  উপশিরার মাধ্যমে জরায়ু থেকে রক্ত ইন্টার্নাল ইলিয়াক ভেইনে ফিরে যায় ।  জরায়ুতে অনেক নার্ভের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে এবং তা আসে বস্তির Splanchnic  ও Vaginal প্লেক্সাস থেকে ।


জরায়ুর কাজ:-

     জরায়ুর প্রধান কাজ হচ্ছে নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড ওভাম বা ভ্রুণের প্রথম অংকুর কে গ্রহণ করা ও ভ্রুণের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার লালন পালনের ব্যবস্থা করা অর্থাৎ গর্ভ গ্রহণ করা ও নয়  মাস দশ দিন সেই ভ্রুণকে সযত্নে ধারণ করে রাখা । তাছাড়া সন্তান প্রসবে সাহায্য করা, মাসিক ঋতু কাজে অংশগ্রহণ করা প্রভৃতি হচ্ছে জরায়ুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।








Saturday 22 May 2021

২/ জরায়ু বা গর্ভাশয় ( Uterus বা Womb )

 ২/ জরায়ু বা গর্ভাশয় ( Uterus বা Womb )

     মহিদের পেলভিস বা বস্তিকোটর  অর্থাৎ তলপেটে অবস্থান করে জরায়ু বা গর্ভাশয় নামক মাংসপেশী  সমৃদ্ধ  স্ত্রী অন্তজননেন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি । জরায়ুর ভেতর টা ফাঁপা ( hollow ) এবং দেখতে অনেকটা ন্যাসপাতি পেঁপে বা ন‍্যাসপাতির মত । অবিবাহিত মহিলাদের জরায়ু শশার মত দেখতে হয় । গর্ভাবস্থায় জরায়ুটি ভ্রুণকে নয় মাস দশ দিন ধারণ করে রাখে । এই জরায়ুর মধ্যেই ভ্রুণ প্রতিপালিত হয় এবং বাড়তে থাকে । জরায়ুর চারপাশের দেয়াল বেশ মোটা পেশি দিয়ে গঠিত হয় । জরায়ুর  বাইরের আবরণটি অর্থাৎ প্রথম স্তরটি পেরিটোনিয়াম পর্দা ( serous membrane )  দিয়ে গঠিত । এরপরে স্তরটি অর্থাৎ মাঝখানের স্তরটি বেশ মোটা মাংসপেশি দিয়ে গঠিত । জরায়ুর এই মাংসপেশির  আবরণ কে বলে myometrium . এবং শেষের স্তর বা একেবারে ভিতরের আবরণটি মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে গঠিত হয় । ভেতরের এই মিউকাস মেমব্রেনের  আবরণকে বলে জরায়ুর অন্তবেস্টক বা এণ্ডোমেট্রিয়াম ( endometrium ) ।


      জরায়ুর উপরিভাগের দুই পাশে থাকে দুটি ডিম্বকোষ বা ওভারি এবং এর উপরিভাগের দুই প্রান্তে থেকে যে দুটি নালী বারিয়েছে তাদেরকে বলে ডিম্ববাহী নালী বা কালল নল ( Fallopian tubes )।

    নিঃসন্তান মহিলাদের বা যাদের একবারও গর্ভ হয়নি তাদের জরায়ুর (সার্ভিক্স সহ ) লম্বায় তিন ইঞ্চির মত  বা সামান্য বেশি হতে পারে এবং চওড়ায় প্রায় দুই ইঞ্চি হয়ে থাকে । আর ওজন হয় সাধারণত 40 থেকে 50 গ্রামের মধ্যে । তবে দুই একবার সন্তান হয়ে যাবার পর জরায়ু প্রায় দ্বিগুণ ভারী হয়ে যায় ও তার গহ্বর আগের চেয়ে আকারে বড় হয়ে যায় । 

       জরায়ুর  উপরিভাগে গোলাকার বলের মতো অংশটি কে বলে তলদেশ বা ফান্ডাস ( Fundus বা Base ) । এটি হচ্ছে জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশ । এরপর থাকে জরায়ুর যে অংশ আরম্ভ হয়েছে তাকে বলে বডি বা দেহ । এটিকে আবার Corpus  বলা হয় । এটি  জরায়ুর মধ্যভাগ অবস্থিত এবং লম্বা প্রায় দুই ইঞ্চি হয়ে থাকে । বডির নিচের অংশ সরু হয়ে নেমে এসে যে অংশের সৃষ্টি করে করেছে তাকে  জরায়ু গ্রীবা  বা Cervix বলে । 

    বর্তমানে অনেকে অবশ্য জরায়ুকে দুই ভাগে ভাগ করে বর্ণনা করে থাকেন । যেমন মেইন বডি বা প্রধান দেহ এবং সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবা । সার্ভিক্স লম্বায় প্রায় এক ইঞ্চির মত হয় । সার্ভিক্স হচ্ছে জরায়ু নিচের অংশ এবং যোনিপথে এসে যুক্ত হয়েছে । বডি এবং সার্বিক এই দুই অংশের সংযোগস্থল একটু সরু হয় । এই অংশকে বলে Isthmus বা যোজক ।জরায়ু গহ্বরে প্রবেশের পথ হচ্ছে, এই সার্ভিক্স এর মধ্যে একটি ছোট ছিদ্র পথ , যাকে বলে জরায়ুর মুখ ।  সারভিক্সের শেষ অংশটুকু থাকে যোনিপথের মধ্যে ,অর্থাৎ বলা যায় যোনি পথের শেষ ভাগ জরায়ুগ্রীবার কিছুটা অংশ বেষ্টন করে থাকে । নিঃ সন্তান অথবা এক সন্তান নারীদের থেকে বহু সন্তানবতী নারীদের জরায়ু গ্ৰীবা এবং জরায়ুর মুখ অনেকটা বড় হায় । সন্তানহীন মহিলাদের সারভিক্সের মুখ সাধারণত ছোট ও গোলাকৃতি হয় । সারভিক্সের এই ছিদ্রপথ এর ভিতরের দিক অর্থাৎ উপরের দিকের মুখ কে  Internal Os বলে । এবং বাইরের দিকের  External Os বা নিচের মুখে বলে । এই External Os যোনির মধ্যে অবস্থিত অর্থাৎ সারভিক্সের বাইরের মুখ যোনি পথে এসে খুলেছে । যোনির মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করলে সারভিক্সের বাইরের মুখ আঙুলের ডগায় অনুভব করা যায় । এছাড়া সার্ভিস এর অংশবিশেষ যাহা যোনিপথের উপরের দিকের প্রান্তে ঝুলে থাকে সেটাও বাইরে থেকে দেখা যায় । ভ্যাজাইনার মত সারভিক্সের অংশও মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে ঢাকা থাকে । তবে সারভিক্সের মিউকোসা মসৃণ হয় যেটা যোনির মধ্যে দেখা যায় না । যোনিপথের মিউকোসল লাইনিং, করোগেটেড টিনের মতন ঢেউ খেলানো  হয়েথাকে ।

     জরায়ুর দেওয়াল  মোটা বেশি দিয়ে গঠিত হলেও এই পেশী খুবই সম্প্রসারণশীল । জরায়ু পেশির এই সম্প্রসারণশীল গুণ এর জন্যই গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ুর আকার  ক্রমশ বাড়তে থাকে ও বস্তি গহবর ছড়িয়ে আরো কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে বক্ষস্থল এর নিম্নদেশ পর্যন্ত চলে আসে অর্থাৎ জরায়ুর ফাণ্ডাস বুকের স্টার্নাম হাড়ের জাইফয়েড়  পসেসে গিয়ে স্পর্শ করে । প্রসাবের সময় জরায়ুর পেশি সংকুচিত হয়ে সন্তানকে সামনের সার্ভিস ও যোনিপথের মধ্যে দিয়ে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে । গর্ভ অবসানের পর জরায়ু  আবার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ও আগের স্থানে ফিরে আসে । জরায়ু সংকুচিত হয়ে এইরূপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা কে বলে Uterine involution.

    

     জরায়ুর অবস্থান :-

     বস্তিকোটর বা পেলভিসে জরায়ুর অবস্থান উল্টানো ভাবে থাকে যা, উল্টে রাখা কলসির মত দেখায় । জরায়ুর ফাণ্ডাস বা তলদেশ ওপর দিকে এবং   গ্রীবা এবং মুখ নিচের দিকে থাকে ও যোনি মধ্যে আংশিক ঢুকে থাকে । জরায়ুর ভেতরের গহ্বর ক্ষুদ্র এবং লম্বা ও ফাঁপা ত্রিকোন আকৃতির হয়ে থেকে । জরায়ুর পেছনে দিকে থাকে রেক্টাম এবং সামনের দিকে অবস্থান করে ব্লাডার বা মূত্রথলি । মানে ব্লাডার এবং রেকটামে মাঝে অবস্থিত জরায়ু । তলপেটের মাঝামাঝি স্থানে স‍্যাক্রম হাড়ের ও সমান্তরালে এবং সামনের দিকে ব্লাটারের উপর একটু হেলে জরায়ু অবস্থান করে । স্বাভাবিক অবস্থায় সার্ভিক্স এবং জরায়ুর বডির সংযোগস্থল থেকে জরায়ুর বডি ঝুঁকে তলপেটের সামনের দিকে অবস্থান করে । যার ফলে জরায়ুর ফাণ্ডাস তলপেটের সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং দেহটা কিছুটা মূত্রথলির উপরে ঝুঁকে পড়ে । আর সার্ভিক্সের এক্সটার্নাল অস থাকে পেছনে অবস্থিত রেকটাম ও স‍্যাক্রম অস্থির দিকে । দেখা যাচ্ছে যে জরায়ুর কিছুটা antiversion পজিশনে  (অর্থাৎ সামনের দিকে কিছুটা হেলে থাকে ) বস্তি কোটরে থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থায় । জরায়ু চারপাশ বিভিন্ন ধরনের ফাইব্রাস টিস্যুর বন্ধনী অর্থাৎ লিগামেন্ট দ্বারা আটকানো থাকে যেমন ব্রড লিগামেন্ট, রাউন্ড লিগামেন্ট, ইউটেরোস‍্যক্রাল লিগামেন্ট প্রভৃতি  ৬ রকম লিগামেন্ট দিয়ে জরায়ু বস্তিকোটরে আটকানো থাকে ।

    

    জরায়ুর স্থানচ্যুতি:-

      জরায়ু কতকগুলি পেশী, লিগামেন্ট  প্রভৃতির সাহায্যে পেলভিক এর চারপাশে আটকানো থাকলেও এটি একই স্থানে আবদ্ধ থাকে না । এর   নড়াচড়া দেখা যায়, কারণ এর বাঁধন গুলি খুব দৃঢ় নয় । কোনো কারণে এই বাঁধন গুলি শিথিল হয়ে গেলে বা জরায়ুর কতগুলি রোগের কারণে  বা অন্যান্য নানা কারণে জরায়ুটি অনেক সময় স্থানান্তর ঘটে বা সঠিকভাবে অবস্থান করতে পারে না, একেই  বলা হয় জরায়ুর বিচ‍্যুতি বা স্থানচ‍্যুতি । 

    জরায়ুর স্থানচ্যুতি নানা প্রকারের হয় যেমন এ্যণ্টিফ্লেক্সন ( Anteflexion ), রেট্রোফ্লেক্সান Retroflexion ), রেট্রোভার্সান (Retroversion ),  ও প্রল‍্যান্স (Prolapse of uterus)

      এ্যণ্টিফ্লেক্সন:- এ্যণ্টিফ্লেক্সার এর ক্ষেত্রে  ইউটিরাস সম্পূর্ণভাবে সামনের দিকে বেঁকে  গিয়ে ফাণ্ডাস অংশটি সার্ভিক্সের কাছে চলে আসে । এই অবস্থাটি ঠিক রেট্রোফ্লেক্সানের এর বিপরীত অবস্থা । এই ক্ষেত্রে সাধারণত সার্ভিসের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না । এটি স্বাভাবিক স্থানে থাকে । কেবলমাত্র জরায়ুর বিডিটি তলপেটের সামনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ে ।

    রেট্রোফ্লেক্সান:-  এই ক্ষেত্রেও সার্ভিক্সের অবস্থানের কোনো রকম পরিবর্তন হয় না,  তার মুখ  রেক্টাম ও স‍্যাক্রমের দিকে থাকে তবে এক্ষেত্রে জরায়ু পিছন দিকে বেঁকে যায় অর্থাৎ ফাণ্ডাস সহ দেহটি একেবারে পিছন দিকে বেঁকে গিয়ে ফান্ডাস অংশটি মলনালী ও স‍্যাক্রমে গিয়ে স্পর্শ করে ।

রেট্রোভার্সান :- এইক্ষেত্রে জরায়ু না মুড়ে বা নত না হয়ে  সম্পূর্ণ জরায়ুটি সোজা ভাবে পেছন দিকে হেলে পড়ে মানে ফাণ্ডাস সহ জরায়ু বডিটি সরাসরি মলনালীর গায়ে হেলে অবস্থান করে । এটাই  হচ্ছে এ্যণ্টিভার্সানের ঠিক বিপরীত অবস্থান ।

প্রোল‍্যান্স:- যোনির মধ‍্যে জরায়ুর নেমে আসা বা জরায়ু নীচের দিকে ঝুলে পড়াকে বলা হয় প্রোল‍্যান্স । যোনির মধ‍্যে ইউটিরাসের এই নেমে আসা বেশী বা কম হতে পারে । যেমন ইউরটিরাসের  অংশবিশেষ, অর্ধেকের বেশি অথবা সমগ্রহ জরায়ুটিই যোনিপথে ঝুলে থাকতে পারে । অনেক সময় সম্পূর্ণ জরায়ুটি যনি মূখের বাইরে বেরিয়েনি ঝুলে পড়তে পারে, একে তখন Providential of uterus বলে ।






Wednesday 5 May 2021

১/ যোনি বা যোনীনালী( Vagina )

  যোনি বা যোনীনালী( Vagina )

    


    যোনিপথ বা যোনীনালী লেবিয়া মাইনরার ফাঁকা অংশ থেকে অর্থাৎ ভেস্টিবিউলে অবস্থিত যোনিমুখ থেকে আরম্ভ করে জরায়ুমুখ ও তার সঙ্গে যুক্ত জরায়ুগ্রীবার বাইরের অংশে পর্যন্ত বিস্তৃত ।  জরায়ুর সঙ্গে দেহের বাইরের অংশের যোগাযোগ রক্ষা করে এই যোনিপথ । অর্থাৎ অন্তজননেন্দ্রিয়ের সঙ্গে বহিজননেন্দ্রিয়ের যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে যোনিপথ ।  যদিও এটি কে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে অন্ত জননেন্দ্রয়ের অংশ হিসেবে তবুও একে ঠিক সম্পূর্ণভাবে অন্ত জননেন্দ্রিয়ের অংশে বলা যায় না । কারণ আগেই বলেছি যে, এটি প্রধানত আপার আর লোয়ার জেনিটাল ট্রাক্ট  অর্থাৎ ভেতরের বাইরের জননেন্দ্রিয়ের সাথে সংযোগের মাধ‍্যম হিসাবে কাজ করে । এর কিছুটা অংশ দেহের ভিতরে এবং কিছুটা অংশ দেহের বাইরে অবস্থিত । যৌন মিলনের সময় এই পথেই পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করে এবং তা থেকে স্থলন হওয়া  বীর্যরসের ( Semen)  এই  শুক্রকীট গুলো ( Sperm cells )এই পথেই জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে । 

    আবার প্রসবের সময় এই পথ দিয়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় । এই জন‍্য যোনিপথকে আবার প্রসব পথা বলা হয় । যোনি নালির শেষ অংশ সার্ভিক্স বা  জরায়ুগ্রীবার এসে মিশেছে । এই শেষ অংশ সার্ভিক্সকে বেষ্টন করে রাখে । এই সার্ভিসকে সাধারনত আপার ও লোয়ার জেনিটাল ট্রেক্টের সীমানা বা বর্ডার  মানে করা হয় । যোনীনালির সম্মুখভাগ হল যোনি মুখ, যা ভেষ্টিবিউল অঞ্চলে অবস্থিত ।

      যোনিপথের বাইরের আবরণ মাংসপেশি দিয়ে গঠিত  ও  ভিতরের আবরণ অর্থাৎ ভেতরের অংশে থাকে নরম মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লষ্মিক ঝিল্লী । যোনি পথ সম্পূর্ণ সোজা থাকে না । এটি কিছুটা বাঁকা অবস্থায় থাকে । প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের যোনি পথের দৈর্ঘ্য 3 - 4 ইঞ্চির মত লম্বা হয় । যোনিপথের অগ্রভাগ সরু থাকে তবে সার্ভিক্স অর্থাৎ জরায়ুর গ্রীবার কাছে এই পথ কিছুটা চওড়া হয়ে যায় । যোনিপথের উপরে ও নিচে  দুটি দেওয়াল থাকে । উপরে দেওয়াল কে বলে উদ্ধ যোনি দেওয়াল বা সামনের দেওয়াল ( front  বা anterior wall ) এবং নিচে দেওয়াল কে বলে নিম্ন  যোনি দেওয়াল বা পশ্চাৎ যোনি দেওয়াল ( back  বা posterior wall ) । সামনের     দেওয়ালের থেকে পেছনের দেওয়াল  প্রায় এক ইঞ্চি বেশি লম্বা । সামনের দেওয়ালে ঠিক উপরে থাকে মূত্রনালী । পিউবিক হাড়ের  পিছনে ও জরায়ু বডির সামনের কিছুটা ত্রিকোণাকৃতি দেখতে ব্লাডার বা মূত্রথলি অবস্থিত । মূত্রথলি থেকে মূত্রনালী বেরিয়েছে । এবং মূত্রনালীর তলদেশে এণ্টরিয়ার বা উদ্ধ যোনির দেয়ালের গায়ে লেগে থাকে । পস্টরিয়ার দেওয়ালের নিচে বা পেছনে থাকে মলনালী বা মলাধার( rectum ) এবং গুহদ্বার ( anus) ।

    যোনি পথের ভেতরটি খুব কোমল এছাড়া ইলাস্টিক জাতীয় টিস্যু বা তন্তু দিয়ে গঠিত তাই এটি অতীব সম্প্রসারণশীল । মহিলাদের সন্তান উৎপাদনের সময় কালে অর্থাৎ পিউবার্টি  বা যৌবন আরম্ভের সময় থাকে মনোপজ বা ঋতু বন্ধের আগে পর্যন্ত সময় যোনিপথে লম্বা লম্বা অনেক উঁচু-নীচু  ভাঁজ দেখা যায় । তবে যৌবন আগমনের আগে ও মনোপজের পর অবশ্য (এই সময় কেউ এস্ট্রোজেন হরমোন ব্যবহার নাকরলে ) এই ভাঁজ থাকে না ।  তখন যোনীপথের উপরিভাগের ঝিল্লী সমান ও মসৃন হয়ে থাকে । যোনী নালীর উপরোক্ত দুটি দেওয়াল সাধারণত পরস্পর একসাথে লেগে থাকে অর্থাৎ উপর ও নিচের দেওয়াল অভ্যন্তরস্থ ভাগ গায়ে গায়ে সেঁটে থাকে । তবে যোনিপথে বহু খাঁজ থাকায় এবং এটি অতীব সম্প্রসারণশীল হওয়ার জন্য প্রয়োজনে যোনীনালী ফাঁক হয়ে অনেকটা প্রসারিত হয়ে লম্বা ও চওড়ায় বেড়ে যেতে পারে তাই এটিকে ইলাস্টিক চ্যানেলের সঙ্গে তুলনা করা যায় । এই জন্য যৌনমিলন বা সন্তান প্রসব সহজ হয় এবং ভ্যাজাইনা ফাঁক করে চিকিৎসকের পক্ষে এই অঙ্গ সহজে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় । বিশেষ করে প্রসবের সময় এই যোনীনালী ও যোনিমুখ প্রসারিত হয়ে এর ডায়ামিটার প্রায় 3 থেকে 4 ইঞ্চি মত হয়ে যায় । পরে আবার তা সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে । এই যোনী পথে সক্ষ সুক্ষ বহু রক্তনালী ও স্নানু এসে মিশেছে । 

     মহিদের যৌবন আগমনের পর থেকে মনোপজ এর আগে পর্যন্ত সময়কালে যোনিনালী সর্বদা এক প্রকার রস দ্বারা সিক্ত বা ভিজে থাকে, আর এই রস হচ্ছে অ্যাসিড বা অম্ল ভাবাপন্ন । এই রস হচ্ছে অম্ল বা অ্যাসিড ভাবাপন্ন । যোনির মধ‍্যের এই রস হচ্ছে  ল‍্যাক্টক এ্যসিড । এই সময় যোনিপথে সর্বদা ল্যাকটিক এ্যসিড উপস্থিত থাকায়  জনন ইন্দ্রিয় ছোট-খাটো জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাই । যোনির মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে কিছু এপিথেলিয়াল কোষ , আবর্জনা শ্বেত রক্ত কনা ও  কিছু নিরীহ জীবাণু যেমন ল‍্যাক্টব‍্যাসিলাস থাকে । এই ল্যাকটোব্যাসিলাস-এর সাথে যোনি গাত্রে ল্যাকটোজেন-এর  ক্রিয়ার ফলে সেখানে এই ল্যাকটিক অ্যাসিড যুক্ত রসের সৃষ্টি হয় । মেয়েদের যৌবন আগমনের পূর্বে এবং মনোপজ এরপর ভ্যাজাইনাতে এই জীবাণু ও খুব কম দেখা যায় ফলে এই সময় ভ্যাজাইনাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হতে পারে না এবং সেখানে অম্ল রসের অভাব ঘটে ফলে যোনি  শুষ্ক থাকে । মনোপজের পর এই অংশে এস্ট্রোজেনের ঘাটতিও এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী থাকে, তাই এই সময় জননেন্দ্রিয়ের ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে । তবে ঋতুস্রাব চলাকালীন ও প্রসাবের পর কিছুদিন যোনির মধ্যে এই স্বাভাবিক অম্ল রসের অভাব থাকে তাই ওই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাবধানে থাকা উচিত ও যৌনমিলনে এড়িয়ে চলা উচিত । তা না হলে জনন ইন্দ্রিয়ে সহজে ইনফেকশন ঘটতে পারে ।


স্ত্রী অন্তজননেন্দ্রিয়

        স্ত্রী অন্তজননেন্দ্রিয়


   মহিলাদের দেহের ভিতর যে জনন অঙ্গ গুলি অবস্থিত সেগুলো হলো - ১/  যোনি বা যোনি      নালী ( Vagina বা Vaginal canal ),  ২/ জরায়ু (Uterus ), ৩/ ডিম্বাশয়  ( Ovaries ) ও  ৪/ ডিম্ববাহী নালীদ্বয় ( Fallopian  বা  Uterine tube ) ।  স্ত্রী অন্ত জনন ইন্দ্রিয় কে আবার আপার  জেনিটাল ট্রাক্ট  বা জননেন্দ্রিয়ের উপরের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয় ।

    উক্ত জনন অঙ্গ গুলি সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।


Friday 1 February 2019

স্ত্রী জনন ইন্দ্রিয়ে নিচের অংশ :

স্ত্রী জনন ইন্দ্রিয়ে নিচের অংশ :

 


     মহিলাদের  উরুদ্বয় এর  খা্ঁজের মধ্যে তাদের জনন অঙ্গ বা যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি অবস্থিত । একে  জনন ইন্দ্রিয়ের নিচের অংশ বা lower geniaal tract  বলা হয় । এই বহিরিন্দ্রিয়ের নিচের অংশের দুটি প্রধান কাজ  সঙ্গমের সময় পুরুষ লিঙ্গ থেকে বের হওয়া বীর্যকে ভেতরে, মানে জরায়ুর ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়া । এছাড়া অন‍্যটি হচ্ছে বাইরের রোগ জীবানুর হাত থেকে অন্তজনেন্দ্রীয়কে  রক্ষা করা । মহিলাদের  জনন যন্ত্র পথের মুখ অ‍র্থাৎ প্রবেশপথ দেহের বাইরে অবস্থিত তাই সেই পথ দিয়ে জীবাণুরা সহজে ভিতরে প্রবেশ করে নানা রকম গাইনেকোলজিক রোগর হতে পারে । সাধারণত যৌন মিলনের সময় জীবানুরা মহিলাদের যৌনাঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ নিয়ে থাকে । এছাড়া মাসিক বা ঋতুচক্রের সময় যারা  প‍্যাড ব্যবহার  না করে ঘরোয়া সাধারন কাপড় ব্যবহার করেন তা থেকেও গাইনেকোলজিক  সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে বা ঘটতে পারে ।
    স্ত্রী দেহের বাইরের অংশের জনন ইন্দ্রিয়ে যে অংশগুলি অবস্থিত চিত্র সেগুলো হচ্ছে কামাদ্রি  বা Mons pubis,  ভগাঙ্কুর বা Clitoris, বৃহৎ ভগৌষ্ঠ বা Labia majora, ক্ষুদ্র ভগৌষ্ঠ বা Lsbia minora, যোনিপথ বা যোনিমুখ বা Vagina, ভেস্টিবিউল বা Vestibule,  মূত্রনালী মুখ বা Opening of urethra, সতীচ্ছদ বা Hymen, ফুরচেট্টি (Fourchette )। মহিলাদের বহিজনন্দ্রীয়ের এইসব অংশগুলি সমষ্টিকে বলে ভগ (Vluva) । এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে মহিলাদের স্তন দুটিকে তাদের বহি জনন ইন্দ্রিয়ে অঙ্গ হিসাবে ধরা হয় কারণ মহিলার স্তনের সাথে তাঁদের যৌনাঙ্গের যথেষ্ট সম্বন্ধ রয়েছে ।  সে সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা আলোচনা করা হবে ।

বৃহৎ ও ক্ষুদ্র ভগৌষ্ঠ ( লেবিয়া মেজরা ও লেবিয়া মায়নরা ):
     বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ভগৌষ্ঠ হচ্ছে যোনিপথ বা যোনিমুখের বাইরের দিকে দুটি বড় ও দুটি ছোট দরজা বিশেষ । লেবিয়া মেজরা হচ্ছে যোনিপথের বড় দরজা যা বড় দুটি ঠোঁটের মতো দেখতে বা মাংসালো অংশবিশেষ । এটি উপরের দিকে অবস্থিত মন্স পিউবিস অর্থাৎ কামাদ্রির নিচের দিক থেকে শুরু হয়ে মাঝখানে দুভাগ হয়ে যোনির মুখের দুপাশে দিয়ে নেমে নীচের দিকে পেরিনিয়াম পর্যন্ত চলে গেছে যেখানে দুপাশের চামড়ার অর্থাৎ চর্মের সাথে মিশে গেছে ।
     লেবিয়া মেজোরার ভেতরের মসৃণ অংশে অসংখ সিবেশাস গ্ল্যান্ড এবং ঘর্মগ্রন্থি অর্থাৎ মেদ বা তেল স্রাবী গ্ৰন্থি ও ঘাম ‍ক্ষরণের গ্ৰন্থিও অবস্থিত । মহিলাদের যৌবনের  সমাগমে ( puberty ) এই লেবিয়া মেজরা লোম ঢাকা পড়ে যায় ।লেবিয়া মেজরার ভিতরের দিকে এবং যোনিমুখের উভয় পাশ থাকে ছোট দুটো ঠো্ঁটের ন‍্যায় দেখতে ক্ষুদ্র ভগৌষ্ঠৌ বা লেবিয়া মাইনরা      ক্লিটোরিসের দু পাশ দিয়ে নেমে এটি  যোনিমুখের দুটি ছোটো দরজা বা কপাট তৈরি করেছে । ছোট ঠোঁট দুটি খুব পাতলা, ছোটো ও চওড়ায় দুই ইঞ্চির বেশি নয় । মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে গঠিত হওয়ায় খুব নরম হয় । কুমারী মেয়েদের সন্তান হবার আগে মেয়েদের যোনি মুখের এই ছোট দরজা সাধারনতো ভেজা অবস্থায় থাকে । তবে সন্তান হয়ে যাবার পর তা কিছুটা খোলা অবস্থায় দেখা যায় ।

কামাদ্রি :
    মহিলাদের দেহের ঊরুদ্বয়  উদরের নিম্নভাগে অর্থাৎ তলপেটে যেখানে এসে মিশেছে সেই দুই অংশের মাঝের স্থানে কামাদ্রি অবস্থিত ।  সিমফাইসিস পিউবিসের উপর চর্বি এবং মাংস যুক্ত যে উঁচু ঢিবির মাংস যুক্ত যে উঁচু ঢিবির অংশ উপস্থিত তাকে কামাদ্রি বা মন্স পিউবিস বা মন্স ভেনেরিস বলে । এটি মহিলাদেরযৌনাঙ্গের খুব উঁচু ও চওড়া মাংসপিণ্ড বিশেষ এবং বেশ  যৌন অনুভূতিশীল ও যৌন অনুভূতিশীলও । এর নিচেই  দুই লেবিয়া মেজরা বের হয়েছে । যৌবন আগমনে এই কামাদ্রি অংশ লোমে ভরে ওঠে । এছাড়া লেবিয়া মেজরা সহ তার আশপাশের অংশ লোমে ভরে যায় ।

ভগাঙ্কুর :
    ক্ষুদ্র ভগৌষ্ঠদ্বয় অর্থাৎ দুই লেবিয়া মাইনরার একেবারে উপরের জোড়ের কাছে এক টুকরো ঝুলন্ত ‍ক্ষুদ্র উঁচু মাংস পিণ্ড আছে যাকে ভগাঙ্কুর বা ক্লিটোরিস বলে । এটি লম্বায় প্রায় হাফ ইঞ্চি পর্যন্ত হয় । লেবিয়া মেজরাদ্বয় ফাক করলেই এই দুই কপাটের মাথায় অবস্থিত ক্লিটোরিস দেখা যায় । এই ক্লিটোরিসের দিয়ে দু পাশ দিয়ে লেবিয়া মাইনরার দুটি কপাট  আরম্ভ হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে । লেবিয়া মাইনরার উপরের অংশ দ্বারা ক্লিটোরিস ঘোমটার মতন ঢাকা থাকে । এই ক্লিটোরিস হচ্ছে মহিলাদের দেহের অতীব যৌন অনুভূতিশীল স্পর্শকাতর' অংশবিশেষ এটি অংশবিশেষ এটি অংশবিশেষ এটি যৌন অনুভূতিশীল স্পর্শকাতর' অংশবিশেষ । এটি উত্তেজনা পেলে যথা স্পর্শ পেলে বা নড়াচড়া করলে মহিলারা সহজে যৌন কামনায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে । এই ক্লিটোরিসের সাথে পুরুষের স্পেনিশ বা লিঙ্গের অনেক দিক দিয়ে মিল আছে যার জন্য একে পেনিস বা পুরুষাঙ্গের সমতুল্য যন্ত্র বলা হয়ে থাকে । পুরুষের পেনিস এর মত এটিও উত্থানশীল টিস্যু দিয়ে গঠিত হওয়ায় উত্তেজনা পেলে পেনিসের মতোই এটি খাড়া হয়ে ওঠে । ক্লিটোরিসের ওপরে যে ত্বকের আবরণ আছে তাকে prepuc clitoridis বলা হয় । পুরুষাঙ্গের অগ্ৰচ্ছাদার ন‍্যায় এটিও ক্লিটোরিসের অগ্ৰচ্ছাদা । আর ক্লিটোরিসের অগ্রভাগে একটি ছোটো মাংসের গুটি আছে যাকে  glans clitoridis বলে । এটি পুরুষদের গ্ল্যান্স পেনিসে মত এবং ক্লিটোরিসের এই অংশটি সব থেকে বেশি যৌন অনুভূতিশীল অঙ্গ । উত্তেজনাকালে এটি শক্ত ও খাড়া হয়ে ওঠে ও এর প্রেপুসাটি কিছুটা পিছনে সরে গিয়ে গ্ল্যান্স ক্লিটোরিসটি বেরিয়ে পড়ে অর্থাৎ পুরুষদের পুরুষাঙ্গের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়ে থাকে ।

ভেস্টিবিউল (Vestibule ) :
    ভেস্টিবিউল বলতে বোঝায় বিবরদ্বার অর্থাৎ কোন্  অংশে প্রবেশের মুখে যে ফাঁকা বা গহ্বর থাকে তাকে ভেস্টিবিউল বলে । যোনিপথের  বিবরদ্বার বলেতে বোঝায় লেবায়া মাইনরা দ্বয়ের ফাঁক অংশ । এই ভেসিবিউল অংশে থাকে মূত্রনালীর মুখ এবং যোনিমুখ ।এই ভেস্টিবিউল অংশেই  মূত্রনালী এবং যোনিপথের মুখ এসে মিশেছে । যোনিমু হচ্ছে যোনিপথের প্রবেশ পথ । যোনিপথের মুখে একটি পাতলা পর্দা থাকে, এই পর্দাটিকে কুমারী পর্দা বা কুমারীত্ব বা যোনি আবরণী বা সতীচ্ছদ বলে । এটি মূত্রনালী মুখের নীচের দিকে অবস্থিত । কুমারী মেয়েদের যোনীমুখ এই পর্দা দিয়ে আংশিক ভাবে সাধারণত ঢাকা থাকে, কারণ পর্দার মাঝে ছোটো ছিদ্র বা কাটা অংশ ( perforated hymen ) থাকে । মহিলাদের ঋতু দর্শনের সময় এই ছিদ্রপ  দিয়ে মাসিক স্রাবের রক্ত বের হয যায় । কোন কোন মহিলাদের এই ছিদ্রপথ থাকে না, তবে এই পর্দার গঠন যদি পাতলা ও নমনীয় হয় তবে তা প্রথম ঋতু দর্শনের সময় রক্তস্রাবের চাপে ফেটে গিয়ে সতী ছিদ্র পথের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে ঋতুস্রাবের রক্ত বেরিয়ে আসে । তবে পর্দার গঠন পুরো হলে এবং কোন ছিদ্রপথ না থাকলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় ।           
    মহিলাদে প্রথম যৌন মিলনের সময় এই পর্দা কিছুটা ছিঁড়ে গিয়ে  তা আরো কিছুটা বড় হয়ে যায় এবং সন্তান প্রসবের সময় তা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । কুমারী মেয়েদের এই হাইমেন ছিন্ন থাকলে আগে মনে করা হতো সে বুঝি আগেই কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলন ঘটিয়েছে  অর্থাৎ তার সতিত্ব নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু এই ধারণা সব সময় সঠিক নয় তাই আজকাল এই তথ্য একদম নির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না, কারণ এই হাইমেনের ঘনত্ব বিভিন্ন মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন বা তফাৎ হতে পারে, অর্থাৎ নমনীয় কিংবা মোটা ও শক্ত হতে পারে । যা যৌন মিলনের আগেও  নানা কারণে যে কোন সময় মেয়েদের অজ্ঞাতসারে ছিড়ে যেতে পারে । যেমন বেশি খেলাধুলা দৌড়ঝাঁপ করা, ঘোড়া চড়া, যোনি মুখে আঘাত লাগা,  অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে, যোনি ধৌত করণ ইত্যাদি ।আবার যে সব মেয়েদের সম্মোহনের অভ্যাস থাকে তাদের ক্ষেত্রেও এই পর্দা যৌন মিলনের আগে ছিড়ে যেতে পারে ।
 
    কোন কোন মেয়েদের  হাইমেন এতো পুরো এবং শক্ত হয় যে দেখা গেছে বয়ঃসন্ধি কালে তাদের মধ্যে যৌবন আগমনে ঘটে  যৌবনের অন্যান্য সব চিহ্ন দেখা দিয়েছে যেমন স্তনদ্বয় বড় হয়েছে, যৌনাঙ্গে চুলের আবির্ভাব ঘটেছে কিন্তু ঋতুস্রাব হচ্ছে  না, কারণ তাদের এই হাইমেন পর্দা মোটা শক্ত  হওয়ায় সময় মতো তা ফেটে ছিদ্রপথ সৃষ্টি হয়নি, ফলে মাসিক স্রাব এর রক্ত ক্রমশ যোনির মধ্যে জমাহতে থাকছে, এই ভাবে কয়েক মাসের রক্ত জমতে জমতে ক্রমে তা জরায়ু এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সব জায়গা রক্তে ভরে ওঠে এর জন‍্য রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে । এই ঘটনার আসল কারণ অনুসন্ধান করে যদি তা হয় বলে জানা যায় তবে যত শীঘ্র সম্ভব অস্ত্রোপচার করে হাইমেন  ফাল করে কেটে অবরুদ্ধ স্রাব বের করে দিতে হবে । যেসব মেয়েদের শক্ত,মোটা ও অছিদ্র হাইমেন তা ঠিক মত  করে কেটে না দিলে সেই সব নারীদের বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা থাকতে পারে । কদাচিৎ কোন কোন ঘটনায় এই হাইমেন জন্ম থেকেই থাকে না বা সামান্য একটু অংশ থাকতে পারে ।

যোনি মুখ :
    যোনিমুখ ও যোনিপথ সম্পূর্ণ রূপে মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে ঢাকা থাকে, তবে এর ভিতরের গঠন এপিডার্মিস বা বহিঃত্বকের ন‍্যায় ।  যোনি মুখের দুপাশে ডিম্বাকৃতি ছোট ছোট দুটি গ্রন্থি বা গ্ল‍্যাণ্ড থাকে যাদেরকে bartholin's গ্লান্ড বলা হয় । এই গ্ৰন্থি দুটির নালি মুখ এসে খূলেছে যোনিমুখের দু পাশে । যৌন উত্তেজনার সময় এই গ্রন্থি থেকে এক প্রকারের মিউকাস পদার্থ বা চটচটে রস ক্ষরিত হয় ভেস্টিবিউল অংশ এবং যোনিমুখ ও যোনিপথ ভিজিয়ে পিচ্ছিল ও মসৃণ করে ফলে যৌনমিলনে সুবিধা হয় ও পুরুষাঙ্গের প্রবেশ সহজ হয় । এছাড়াও যোনীমুখের বাইরে আশেপাশে আরও অনেক ছোটো ছোটো গ্ৰন্থি থাকে এবং সেগুলি থেকেও ‍ক্ষরিত পিচ্ছিল পদার্থ যোনিমুখ ও যোনিপথ সর্বদা ভিজিয়ে ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে । এই ছোট ছোট গ্ৰন্থিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুটি Skene's gland , এই দুটি গ্ৰন্থি মূত্রনালির ছিদ্রের দুই পাশে অবস্থিত । তবে সব থেকে বেশি রস বার্থোলিন গ্ৰন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । ভ্যাজায়নায় প্রচুর রক্তনালী থাকায় এর ভেতরটা সবসময় লাল দেখায় ।

মূত্রনালী মুখ :
    মহিলাদের মূত্রনালী এবং যোনিপথ সম্পূর্ণভাবে আলাদা থাকে । পুরুষদের যেমন মূত্রনালী এবং পুরুষাঙ্গ এক এবং অভিন্ন যন্ত্র মহিলাদের তা কিন্তু নয় । পুরুষদের লিঙ্গের মধ্যে দিয়েই মূত্রনালী চলে গেছে এবং এটি দিয়ে মূত্র ত্যাগ ও বীর্যস্খলন এই দুটি কাজই সম্পন্ন হয়ে থাকে । মহিলাদের মূত্রনালী দিয়ে কেবলমাত্র মুত্রত্যাগের কাজ সম্পন্ন হয় । মহিলাদের মূত্রনালীর মুখ বা মূত্র ছিদ্র থাকে ক্লিটরিস এবং যোনি মুখের মাঝে । এই ক্লিটোরিস থেকে প্রায় এক ইঞ্চি নিচে মূত্রনালী মুখ এবং মুত্রনালী মুখ থেকে প্রায় আধ ইঞ্চি মত নিচে অবস্থিত যোনিমুখ । পুরুষদের মূত্রনালীযেমন দীর্ঘ হয়   মহিলাদের তা হয় না । মহিলাদের মূত্রনালী ক্ষুদ্র  হয়  এবং যা দেহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে । ব্লাডার থেকে এই নালী বেরিয়ে ভেস্টিবুলে এসে খুলেছে । মূত্রনালীর মুখ স্ফিংটার পেশি দিয়ে গঠিত বলে ইচ্ছামত মূত্রত্যাগ  ও বন্ধ করা সম্ভব হয় ।

গুহ‍্যদ্বার (Anus):
    গুহ‍্যদ্বার  ও  ভ্যাজাইনার মধ্যবর্তী ফাইব্রোমাস্কুলার স্থানকে পেরিনিয়াম বা বিটপ বলা হয় । এই অংশটি সাধারণত দেড় থেকে পৌনে দুই ইঞ্চির মতো লম্বা । তবে প্রসবের সময়   এই দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ হয়ে যায় । পেরিনিয়াম অংশের ত্বক বা এপিডার্মিস  এর গঠন দেহের অন্যান্য অংশের ত্বকের মতো একই । এই অংশের ত্বক মোটা এবং শক্ত থাকে ও কখনো  তা আঁশ যুক্ত হতে পারে । দুই লেবিয়া মাইনরার নিচের দিকের প্রান্ত ও যোনিমুখের নিচের অংশে যে অর্ধচন্দ্রাকার ত্বকের ভাজ দেখা যায় তাকে  বলে ফুরচেকট্টি । এটিই হচ্ছে পেরিনিয়াম ও যোনিমুখের সন্ধি স্থান । যৌনক্রিয়ার সময়  অবশ্য এর কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে ।