Monday 14 June 2021

৪/ ডিম্ববাহী নালীদ্বয় :-

 ৪/ ডিম্ববাহী নালীদ্বয় :-

    জরায়ুর উপরিভাগের ফান্ডাস অংশের দুই প্রান্ত থেকে মনে যেখানে ফান্ডাস ও বডি মিলিত হয়েছে সেই অংশের দুই পাশ থেকে শিং- এর মত দুটি  লম্বা ও সরু নালী বেরিয়ে ডিম্বাশয় দুটির সামনে ডালপালা ছড়িয়ে আছে, তাদের বলে ডিম্ববাহী নালী বা ফ্যালোপিয়ান টিউব বা কালল নল । 

    এখানে জেনে রাখা দরকার যে, জরায়ুর দুপাশ দিয়ে এবং দু'পাশের দুটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের তলা দিয়ে অনেকটা বাদুড়ের পাখনার মতন দেখতে পেরিটোনিয়াম পর্দা দিয়ে তৈরী যে ব্রড লিগামেন্ট বা চওড়া বন্ধনী বের হয়ে এসে পেলভিসের দুই পাশের দেওয়ালে যুক্ত থাকে সেই বন্ধনী জরায়ুকে দুই পাশ দিয়ে ট্নে বস্তি গহ্বরেররে সাথে আটকে রাখে । এই ব্রড লিগামেন্টের  যে অংশ দ্বারা ইউটারিন যুক্ত থাকে তাকে বলে মেসোস‍্যলপিংক্স আর যে অংশ দ্বারা জরায়ু আটকে থাকে তাকে বলে মেসোমেট্রিয়াম এবং যে অংশ দ্বারা ডিম্বাশয় দুটি আটকানো থাকে তাকে বলে মেসোওভারিয়াম ।

    প্রতিটা ফ্যালোপিয়ান টিউব প্রায় 3 থেকে 4 ইঞ্চি লম্বা এবং 1/4 ইঞ্চির মত মোটা । এই ফ‍্যালোপিয়ন টিউবের একদিকে প্রান্ত বা এক দিকের মুখ জরায়ুর সাথে যুক্ত এবং এই মুখটি খুব সরু হয় । নলের অন্য মুখ খোলা থাকে এবং সেই মুখ দিয়ে পেরিটোনিয়াম ক্যাভিটিতে এসে উনমুক্ত হয়েছে । অর্থাৎ খোলা অন্য মুখটি পেরিটোনিয়াম গহ্বরে থেকে ।  এই খোলা দিকের প্রান্তটি ফানেলের মত প্রসারিত । সরু সরু  অনেকগুলো অংশ এই মুখের চারপাশ থেকে বেরিয়ে ফানেল বা ঝালরের মতন প্রসারিত হয়ে পেরিটোনিয়াম ক‍্যাভিটিতে ঝুলে থাকে । এই ভাবে খোলা প্রান্তটি বড় অপসারিত হয়ে থাকার ফলে ডিম্বকোষ থেকে বের হওয়া ডিম্বাণু সহজেই ঢুকে পড়তে পারে ।  ফ্যালোপিয়ান টিউবের  এই ফানেল বা ঝালরের  মত অংশটি কে বলে ফিমব্রীয়েটেড এন্ড । এই ফানেলের মত অংশ অংশের উপরে অর্থাৎ চওড়া  অংশকে বলে  Ampula, এবং ফ‍্যালোপিয়ান টিউবের যে সরু অংশ গিয়ে জরায়ুতে যুক্ত হয়েছে তাকে বলা হয় Isthmus বা যোজক ।




Tuesday 8 June 2021

৩/ ডিম্বকোষ দায়ী :-

 ৩/ ডিম্বকোষ দায়ী :-


    মহিলাদের তলপেটে কাছে জরায়ুর দু'পাশে দুটি টিউবের তলায় অবস্থান করে দুটি ডিম্বকোষ, একটি জরায়ুর বামদিকে ও অন্যটি থাকে ডানদিকে । ডিম্বকোষ দুটি কিন্তু ফ‍্যালোপিয় টিউব এর সাথে যুক্ত থাকে না । ব্রড লিগামেন্ট দিয়ে তারা আবদ্ধ এবং ফ্যালোপিনিয়ন টিউবের তলায় গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে । এছাড়া ওভারি লিগামেন্ট নামে এক রকম গোলাকার শক্ত ফাইব্রাস টিস্যুর বন্ধনী দিয়ে এই দুটি জরায়ুর  সাথে যুক্ত থাকে । ডিম্বাকৃতি বা ছোট বাদামের মত আকৃতি বিশিষ্ট মুক্ত বর্ণের দেখতে এই ওভারি প্রতিটি লম্বায় প্রায় এক ইঞ্চির কিছু বেশি ও চওড়া প্রায় আধ ইঞ্চির সামান্য বেশি হয়ে থেকে । ওভারির এক প্রান্ত ফ্যালোপিয়ান টিউবের ফিমব্রিয়েটেড  এন্ড বা ঝালরের মতন অংশের দিকে থাকে ও অন‍্য প্রান্ত লিগামেন্ট অফ ওভারি দ্বারা যুক্ত থাকে । ওভারি ও জরায়ুর মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা হচ্ছে ফ্যালোপিয়ান টিউব । যে কোনো একটি ওভারী থেকে প্রতি 28 দিন অন্তর একটি করে পরিপক্ক ডিম্বাণু ক্ষরণ হয়ে পেরিটোনিয়াম গহ্বরে পড়ে । যে দিকের ডিম্বাশয় থেকে ডিম ক্ষরণ হয় সেই দিকের ফ‍্যালোপিয় টিউব তার ঝালরের মত মুখ দিয়ে সেই ডিম্বাণুকে  ধরে নিয়ে নিজের নালীতে ঢুকিয়ে দেয় । টিউবের মধ্যে চুলের মতন অসংখ্য সিলিয়া থাকে এবং এই সিলিয়া গুলি ডিম্বানুকে ঢেউয়ের মতন তাড়িয়ে জরায়ুর মধ্যে নিয়ে যায় । ফ্যালফ্যাল টিউবের প্রধান কাজ হচ্ছে ডিম্বাণু কে এগিয়ে এনে জরায়ুর মধ্যে ফেলে দেওয়া । আবার এই নালিপথে শুক্রকীট ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটে সেটি নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড  হয় অর্থাৎ ভ্রূণের প্রথম অংকুরের জন্ম হয় বা গর্ভধারণ ঘটে ।

 

   ডিম্বাশয়ের কাজ:- পুরুষের যৌন গ্রন্থি যেমন তাদের দুটি অণ্ড গন্থি বা টেস্টিস, তেমনি মহিলাদের যৌন গ্রন্থি হচ্ছে এই দুটি ডিম্বকোষ । পুরুষদের যৌন গ্রন্থির কাজ যেমন শুক্তকীট বা Sperm cell ও পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি করা তেমনি মহিলাদের ওভারির কাজ হচ্ছে  স্ত্রী যৌন হরমোন ও ডিম্বাণু তৈরি করা । ওভারি থেকে দুই ধরনের হরমোন ক্ষরণ হয়, যথা এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন । এস্ট্রোজেন বা ইস্ট্রোজেনিক হরমোনের মধ্যে এস্ট্রাডিওল হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও খুব সক্রিয় এস্ট্রোজেন হরমোন যা প্রাকৃতিক ভাবে ওভারিয়ান ফলিকল থেকে তৈরি হয় এবং যা এ্যণ্টিরিয়ার পিটুইটারি গোনাডোট্রফিন্সের নির্দেশমতো তৈরি হয় । অন্যান্য ন্যাচারাল এস্ট্রোজেন হচ্ছে এস্ট্রোন এবং এস্ট্রিওল । অবশ্য এস্ট্রিওলটি হচ্ছে দুর্বল ধরনের এস্ট্রোজেন যা এস্ট্রাডিওল ও এস্টোনের মেটাবলিক প্রোডাক্ট রূপে দেহে তৈরি হয় এবং তা মূত্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বিশেষ করে গর্ভবতীদের মূত্রে । প্রোজেস্টেরন বা প্রজেট্রোজেন বা প্রজেস্ট্রোজেনিক হরমোনের মধ্যে প্রোজেস্টেরন হচ্ছে মুখ্য প্রোজেস্টেরন হরমোন, যা কর্পাস লুটিয়াম থেকে তৈরি হয় এবং গর্ভবস্থাই প্লাসেন্টা থেকেও এটি তৈরি হয় । পিউবার্টি বা যৌবন আগমনের সাথে সাথে             মহিলাদের এই যৌনগ্রন্থি অর্থাৎ ওভারি সক্রিয় হয়ে উপরোক্ত দুটি  যৌন হরমোন ও ডিম্বাণু তৈরি শুরু করে দেয়  । এই সময় এই যৌন হরমোন এর প্রভাবে মহিলাদের দেহে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে অর্থাৎ সেকেন্ডারি সেক্স ক্যারেক্টার বা স্বাভাবিক যৌন চরিত্রের বিকাশ ঘটে । এই হরমোনের প্রভাবে প্রধানত এস্ট্রোজেনের প্রভাবে মহিলাদের জনন যন্ত্রগুলি সক্রিয় বা উজ্জীবিত হয়ে নিয়মিত ঋতুস্রাব হতে থাকে । এছাড়া স্তন, যৌনাঙ্গ, প্লাসেন্টা, গর্ভ প্রভৃতি পুষ্টি সাধন ও নিয়ন্ত্রণ হরমোনের প্রভাবে ঘটে । গর্ভ সংক্রান্তঃ কাজে অবশ্য প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা বেশি দেখা যায়, তাই এই সময় এই হরমোনটির কর্মতৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে ।স্ত্রী জনন যন্ত্রের সম্পূর্ণ ক্রিয়া-কলাপেরর ক্ষেত্রে এই দুই যৌন হরমোনের  যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে । এই যৌন হরমোনের ক্ষরণ ও ক্রিয়া-কলাপ এবং ওভারির গঠন ও কার্য  আবার এ্যণ্টিরিয়ার ও পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের গোনাডোট্রপিক হরমোন গুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । এই হরমোন দুটি হচ্ছে FSH ও  LH .

    প্রতিটি ডিম্বকোষে কয়েক লক্ষ্য ডিম্বাণু থাকে । তবে শৈশব বা বালিকা অবস্থায় এইসব ডিম্বাণু অপরিনত, অপরিপক্ক অবস্থায় থাকে । অপক্ক ডিমকে Oocyte  বলে ।

    মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক ঋতুস্রাবের সময় থেকে এইসব ওভাম পরিণত হতে থাকে । মেয়ে শিশুর জন্মের সঙ্গে তার উদরে থাকা ওভারির মধ্যে লাখ লাখ অপক্ক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় । মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মেয়ের ভ্রূণের কুড়ি থেকে বাইশ সপ্তাহ বয়সে তার ডিম্বাশয় দুটির মধ্যে  পঞ্চাশ, ষাট লক্ষ থেকে 2 কোটি পর্যন্ত ও ডিম্বাণুর জন্মে যায় । এই ডিম্বাণু গুলি প্রতিটি একটি করে ফলিকল বা রস পূর্ণ থলির মধ্যে অবস্থান । তবে এই লাখ লাখ ফলিকলের বেশিরভাগই ঠিকমতো তৈরি হতে বা বাড়তে পারে না বলে গর্ভে থাকাকালীন মেয়ে ভ্রূণের বেশিরভাগ ডিম্বাণু ক্রমে নষ্ট হয়ে যায় এবং জন্মের সময় তার ওভারিতে তখন পনেরো কুড়ি লক্ষ অপক্ক ডিম্বাণু থাকে । আবার এর মধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ ডিম্বাণু কাল ক্রমে নষ্ট হয়ে গিয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময় ওভারির মধ্যে দুই থেকে চার লক্ষ  ডিম্বাণু  অবশিষ্ট থাকে ।

    ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বাণু গুলি যে রসপূর্ণ থলির মধ্যে আবদ্ধ থাকে সেই থলি কে বলে শিশু ফলিকল বা আদি ফলিকল বা Primordial follicle । প্রতিটি Primordial follicle-এর দেওয়ালে একটি করে ডিম্বাণু সুপ্ত ও অপক্ব অবস্থায় গাঁথা থাকে । পিটুইটারি গ্রন্থির এ্যণ্টিরায়ার লেবের গোনাডোট্রপিক হরমোনের  প্রধানত FSH  বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবে প্রতি মাসিক ঋতুচক্রে যথাসময়ে একটি করে প্রাইমোরডিয়াল ফলিকল ও তার ভেতরকার ডিম্বাণু বৃদ্ধি পায় এবং পরিপুষ্ট  হয়ে যে অবস্থা প্রাপ্ত হয় তাকে ওভারিয়ান ফলিকল বা গ্রাফিয়ান ফলিকল বলে । গোনাডোট্রপিক হরমোনের প্রভাবে গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে এস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণ হয় ‌।                 

  মহিলাদের  পিরিয়ডের অর্থাৎ ঋতু চক্রের শূরুর সময় থেকে তাদের ওভারিতে দুই থেকে চার লাখ মত অপক্ক ডিম্বাণু থাকে, কিন্তু একজন নারীর সমগ্রহ ঋতুকালে বয়ঃসন্ধিতে মাসিক স্রাব আরম্ভের সময় থেকে পৌঢ়ত্বের  ঋতুবন্ধ পর্যন্ত সময়কালে কেবল মাত্র 300 থেকে 400 টি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে এবং বাকি অসংখ্য ডিম্বাণু শিশু অবস্থাতেই নষ্ট হয়ে মিলিয়ে যায় । একজন মহিলার জীবনে 300 থেকে 400 বার ওভুলেশান ঘটে অর্থাৎ তাঁর সমগ্র সন্তান জন্মদান জীবনে 300 থেকে 400 বার ঋতুস্রাব হওয়া । সাধারণ প্রতিটি ঋতুচক্রে একটি করে ডিম্বাণুর স্ফুটন হয় অর্থাৎ একটি ডিম্বাণু ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে । এর মধ্যে যে ক'টি শুক্রকীটের সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্ভাধান ঘটে সেই ক'টি ছাড়া আর সব গুলোই জরায়ুতে আসার পর মৃত অবস্থায় এক এক করে যথা সময়ে মাসিক ঋতুস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় । দুটি ডিম্বকোষের মধ্যে কখনো ওপাশের কখনো এপাশের  ডিম্বকোষ থেকে ডিম্বাণু নির্গমন ঘটে । যে পর্যন্ত না ডিম্বাণু গুলি ওভাম থেকে মুক্ত হয় সেই পর্যন্ত তারা Primordial follicle-এ সুপ্ত অবস্থায় থাকে তবে দেহের সেল গুলি বা জীব কোষদেহের মধ্যে যেমন প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক ভাঙ্গা গড়ার কাজ চলে ফলিকলের মধ্যে আবদ্ধ ঐ ডিম্বাণুর মধ্যে সেই রকম কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলে না, তাই মহিলাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিম্বাণু গুলির  ক্ষয় ক্ষতির সংখ্যা ও বাড়ে । এই কারণে মহিলাদের বেশি বয়সে গর্ব হলে সন্তানের মধ্যে জেনেটিক অস্বাভাবিকতার সম্ভাবনা বেশি থাকে  বলে দেখা গেছে ।

     মহিলাদের পিউবার্টি  বা বয়ঃসন্ধিকালে ওভারি নিঃসৃত হরমোনের অভাব হলে যৌন যন্ত্রগুলি স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও নারী দেহে সেকেন্ডারি সেক্স ক্যারেক্টার বা যৌবনের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে না । জনন যন্ত্র দুর্বল ও শিশু অবস্থায় রয়ে  যায় এবং দেহ ও মনের বিকাশের ও থেমে যায় । যদি একটি ডাম্বাশয় বিকল্প নষ্ট হয়ে যায় তবে অন্যটি সাহায্যে কাজ চলে যায় কিন্তু মহিলাদের  যদি দুটি ওভারি  বা ডিম্বাশয় নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেক্স হরমোনের অভাবে প্রিম্যাচিওর মনোপজ হয়ে জননতন্ত্র অকালে দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যায়, ঋতুস্রাব হয় না বা গর্ব হয় না এবং দৈহিক ও মানসিক নানা লক্ষণ দেখা দেয় যা সারণত মহালাদের স্বাভাবিক মনোপজ-এর পর দেখা যায় । তবে একটি ওভারি সক্রিয় বা ভালো  থাকলে ঋতুস্রাব ও গর্ব  হবে ।