Saturday 29 May 2021

জরায়ুর স্থানচ্যুতি কারণ :-

  জরায়ুর স্থানচ্যুতি কারণ :-



    নানা কারণে জরায়ুর স্থানচ্যুতি হতে পারে, যেমন কষ্টকর প্রস্তাব, প্রস্রাবের পর ভারী কোনো জিনিস তোলা নামা করা বা বেশি পরিশ্রম করা অথবা পড়ে গিয়ে তলপেটে আঘাত কিংবা বার বার গর্ভপাত হওয়া, প্রস্রাবের ঠিক পরেই গর্ভবতী হওয়া,  হঠাৎ উঠে বসা বা দাঁড়ানো, যৌন মিলনের সময় জরায়ূতে আঘাত পাওয়া, বিশেষত কাঁচা পোয়াতি অবস্থায় অর্থাৎ প্রসবের পর যাদের জরায়ুর তখনও স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি এমন অবস্থায় মিলিত হলে জরায়ুর স্থানচ‍্যুতি ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় ।  এছাড়া বাহ্য প্রস্রাবের সময় বার বার বেশি চাপ বা কোঁথ দেওয়া বা জরায়ুর সংক্রান্ত নানা রকম রোগ যেমন এণ্ডোমেট্রাইটিস, জরায়ুর টিউমার ইত্যাদি কারণে জরায়ুর অবস্থান পরিবর্তন হয় । এছাড়াও গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধির সাথে সাথে তার সঙ্গে সংলগ্ণ বন্ধনী ও পেশী গুলিতে টান পড়ে সেগুলি অনেক বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের পর জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হবার সময় অর্থাৎ জরায়ুর গুটিয়ে স্বাভাবিক হবার সময় সংলগ্ণ বন্ধনী ও পেশীগুলি যদি ঠিকমতো সংকুচিত না হয়ে আগের মত অবস্থায় ফিরে না আসে ও ঢিলা থেকে যায় তাহলেও জরায়ুর ডিসপ্লেমেন্ট ঘটতে পারে । বিশেষত এই অবস্থায় যদি খাটাখাটনি বেশী করা বা আঘাত জনিত কোন ঘটনা ঘটে । অনেক সময় বহু সন্তানবতীদের জরায়ু ও তার লিগামেন্ট বা বন্ধনী গুলি স্থায়ীভাবে শিথিল হয়ে পড়ে ফলে এ ক্ষেত্রে স্থানচ্যুতি এড়ানো যায় না ।

    রেট্রোভার্সান, রেট্রোফ্লেক্সান এবং প্রোল‍্যান্স প্রকারের স্থানচ‍্যুতি সাধারণত সন্তানবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষকরে বহু সন্তানবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে । তবে জন্মগতভাবেও কারো কারো রোট্রোভার্টড জরায়ু দেখা যেতে পারে । এছাড়াও কষ্টকর প্রসবের পর দীর্ঘদিন ধরে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে জরায়ু রেট্রোভার্সানের সম্ভাবনা থাকে । নিঃসন্তান বা কুমারী মেয়েদের রেট্রোফ্লেক্সান খুব কম হয় । প্রল‍্যান্স স্থানচ্যুতি অনেক সময় জরায়ুর রেট্রোভার্সান থেকেও হতে পারে । রেট্রভার্টেড ইউরিটাসে গর্ভসঞ্চার হলে অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এই অবস্থায় জরায়ু খুব বেশি শক্ত হয়ে ওঠে  এবং তখন তা নীচে রেক্টাম ও উপরের ব্লাডার কে চেপে ধরে,বা অবরোধের লক্ষণ প্রকাশ করে । এছাড়া রেট্রোভার্টেড় ইউটিরাস কেসে অন্যান্য আরো যেসব দুর্বল দেখা দেয় তা হল, ঋতুস্রাবের গোলমাল ঘটে । প্রতি মাসিকের সময় জরায়ুতে প্রচুর পরিমানে রক্ত আসে এবং সেই সময় রেক্টামে অবরোধ ঘটতে দেখা যায় । জরায়ু থেকে অত্যাধিক রক্তস্রাব হতে পারে । লিউকোরিয়া হতে পারে এছাড়াও কোমরে ও পিঠে বেদনা এবং অনেকের মাসিক বিকার দেখা দেয় । অনেক সময় এর থেকে জরায়ুর Prolapse  হতে পার ।


প্রসবের পর জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত :-     

       প্রসাবের পর জরায়ু আস্থে আস্থে সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে এবং ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে তার পূর্ব অবস্থায় তথা স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আসে । এই সময়কে Puerperium বলে । এই সময় সহবাস বা যৌন মিলন করা উচিত নয় ।এই সময় সহবাস করলে কাঁচা বা দুর্বল জরায়ুতে আঘাত লাগে তার স্থানচ্যুতি ঘটতে পারে ।  কুমারী  বা নিঃসন্তান মহিলাদের জরায়ু থেকে সন্তানবতী মহিলাদের জরায়ু প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং তার গহ্বরও আগের থেকে বড় হয়ে যায় । মহিলাদের শৈশবের জরাই ছোট এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে তবে বয়সন্ধি বা যৌবন আগমনের সাথে সাথে এটি বড় হয়ে স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং যৌন হরমোন এর প্রভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে । মনোপজের পর এবং বার্ধক্যে মহিলাদের জরায়ু শুকিয়ে ছোট হয়ে আসে । জরায়ুর মাঝে খাঁজ পড়ে  এবং এর মধ্যে রক্ত চলাচলও  কমে আসে যার ফলে সেটি ফ্যাকাশে দেখায় । অনেক সময় জরায়ুর গ্রীবার মুখবুজে যায় ।


জরায়ুতে নার্ভ ও রক্ত সরবরাহ:-

    ইউটারিন ধমনী নামক ইন্টার্নাল ইলিয়াক ধমনীর একটি প্রশাখা থেকে জরায়ুর মধ্যে রক্ত সরবরাহ হয় এবং এটি  উপশিরার মাধ্যমে জরায়ু থেকে রক্ত ইন্টার্নাল ইলিয়াক ভেইনে ফিরে যায় ।  জরায়ুতে অনেক নার্ভের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে এবং তা আসে বস্তির Splanchnic  ও Vaginal প্লেক্সাস থেকে ।


জরায়ুর কাজ:-

     জরায়ুর প্রধান কাজ হচ্ছে নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড ওভাম বা ভ্রুণের প্রথম অংকুর কে গ্রহণ করা ও ভ্রুণের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার লালন পালনের ব্যবস্থা করা অর্থাৎ গর্ভ গ্রহণ করা ও নয়  মাস দশ দিন সেই ভ্রুণকে সযত্নে ধারণ করে রাখা । তাছাড়া সন্তান প্রসবে সাহায্য করা, মাসিক ঋতু কাজে অংশগ্রহণ করা প্রভৃতি হচ্ছে জরায়ুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।








No comments:

Post a Comment