Wednesday 5 May 2021

১/ যোনি বা যোনীনালী( Vagina )

  যোনি বা যোনীনালী( Vagina )

    


    যোনিপথ বা যোনীনালী লেবিয়া মাইনরার ফাঁকা অংশ থেকে অর্থাৎ ভেস্টিবিউলে অবস্থিত যোনিমুখ থেকে আরম্ভ করে জরায়ুমুখ ও তার সঙ্গে যুক্ত জরায়ুগ্রীবার বাইরের অংশে পর্যন্ত বিস্তৃত ।  জরায়ুর সঙ্গে দেহের বাইরের অংশের যোগাযোগ রক্ষা করে এই যোনিপথ । অর্থাৎ অন্তজননেন্দ্রিয়ের সঙ্গে বহিজননেন্দ্রিয়ের যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে যোনিপথ ।  যদিও এটি কে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে অন্ত জননেন্দ্রয়ের অংশ হিসেবে তবুও একে ঠিক সম্পূর্ণভাবে অন্ত জননেন্দ্রিয়ের অংশে বলা যায় না । কারণ আগেই বলেছি যে, এটি প্রধানত আপার আর লোয়ার জেনিটাল ট্রাক্ট  অর্থাৎ ভেতরের বাইরের জননেন্দ্রিয়ের সাথে সংযোগের মাধ‍্যম হিসাবে কাজ করে । এর কিছুটা অংশ দেহের ভিতরে এবং কিছুটা অংশ দেহের বাইরে অবস্থিত । যৌন মিলনের সময় এই পথেই পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করে এবং তা থেকে স্থলন হওয়া  বীর্যরসের ( Semen)  এই  শুক্রকীট গুলো ( Sperm cells )এই পথেই জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে । 

    আবার প্রসবের সময় এই পথ দিয়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় । এই জন‍্য যোনিপথকে আবার প্রসব পথা বলা হয় । যোনি নালির শেষ অংশ সার্ভিক্স বা  জরায়ুগ্রীবার এসে মিশেছে । এই শেষ অংশ সার্ভিক্সকে বেষ্টন করে রাখে । এই সার্ভিসকে সাধারনত আপার ও লোয়ার জেনিটাল ট্রেক্টের সীমানা বা বর্ডার  মানে করা হয় । যোনীনালির সম্মুখভাগ হল যোনি মুখ, যা ভেষ্টিবিউল অঞ্চলে অবস্থিত ।

      যোনিপথের বাইরের আবরণ মাংসপেশি দিয়ে গঠিত  ও  ভিতরের আবরণ অর্থাৎ ভেতরের অংশে থাকে নরম মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লষ্মিক ঝিল্লী । যোনি পথ সম্পূর্ণ সোজা থাকে না । এটি কিছুটা বাঁকা অবস্থায় থাকে । প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের যোনি পথের দৈর্ঘ্য 3 - 4 ইঞ্চির মত লম্বা হয় । যোনিপথের অগ্রভাগ সরু থাকে তবে সার্ভিক্স অর্থাৎ জরায়ুর গ্রীবার কাছে এই পথ কিছুটা চওড়া হয়ে যায় । যোনিপথের উপরে ও নিচে  দুটি দেওয়াল থাকে । উপরে দেওয়াল কে বলে উদ্ধ যোনি দেওয়াল বা সামনের দেওয়াল ( front  বা anterior wall ) এবং নিচে দেওয়াল কে বলে নিম্ন  যোনি দেওয়াল বা পশ্চাৎ যোনি দেওয়াল ( back  বা posterior wall ) । সামনের     দেওয়ালের থেকে পেছনের দেওয়াল  প্রায় এক ইঞ্চি বেশি লম্বা । সামনের দেওয়ালে ঠিক উপরে থাকে মূত্রনালী । পিউবিক হাড়ের  পিছনে ও জরায়ু বডির সামনের কিছুটা ত্রিকোণাকৃতি দেখতে ব্লাডার বা মূত্রথলি অবস্থিত । মূত্রথলি থেকে মূত্রনালী বেরিয়েছে । এবং মূত্রনালীর তলদেশে এণ্টরিয়ার বা উদ্ধ যোনির দেয়ালের গায়ে লেগে থাকে । পস্টরিয়ার দেওয়ালের নিচে বা পেছনে থাকে মলনালী বা মলাধার( rectum ) এবং গুহদ্বার ( anus) ।

    যোনি পথের ভেতরটি খুব কোমল এছাড়া ইলাস্টিক জাতীয় টিস্যু বা তন্তু দিয়ে গঠিত তাই এটি অতীব সম্প্রসারণশীল । মহিলাদের সন্তান উৎপাদনের সময় কালে অর্থাৎ পিউবার্টি  বা যৌবন আরম্ভের সময় থাকে মনোপজ বা ঋতু বন্ধের আগে পর্যন্ত সময় যোনিপথে লম্বা লম্বা অনেক উঁচু-নীচু  ভাঁজ দেখা যায় । তবে যৌবন আগমনের আগে ও মনোপজের পর অবশ্য (এই সময় কেউ এস্ট্রোজেন হরমোন ব্যবহার নাকরলে ) এই ভাঁজ থাকে না ।  তখন যোনীপথের উপরিভাগের ঝিল্লী সমান ও মসৃন হয়ে থাকে । যোনী নালীর উপরোক্ত দুটি দেওয়াল সাধারণত পরস্পর একসাথে লেগে থাকে অর্থাৎ উপর ও নিচের দেওয়াল অভ্যন্তরস্থ ভাগ গায়ে গায়ে সেঁটে থাকে । তবে যোনিপথে বহু খাঁজ থাকায় এবং এটি অতীব সম্প্রসারণশীল হওয়ার জন্য প্রয়োজনে যোনীনালী ফাঁক হয়ে অনেকটা প্রসারিত হয়ে লম্বা ও চওড়ায় বেড়ে যেতে পারে তাই এটিকে ইলাস্টিক চ্যানেলের সঙ্গে তুলনা করা যায় । এই জন্য যৌনমিলন বা সন্তান প্রসব সহজ হয় এবং ভ্যাজাইনা ফাঁক করে চিকিৎসকের পক্ষে এই অঙ্গ সহজে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় । বিশেষ করে প্রসবের সময় এই যোনীনালী ও যোনিমুখ প্রসারিত হয়ে এর ডায়ামিটার প্রায় 3 থেকে 4 ইঞ্চি মত হয়ে যায় । পরে আবার তা সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে । এই যোনী পথে সক্ষ সুক্ষ বহু রক্তনালী ও স্নানু এসে মিশেছে । 

     মহিদের যৌবন আগমনের পর থেকে মনোপজ এর আগে পর্যন্ত সময়কালে যোনিনালী সর্বদা এক প্রকার রস দ্বারা সিক্ত বা ভিজে থাকে, আর এই রস হচ্ছে অ্যাসিড বা অম্ল ভাবাপন্ন । এই রস হচ্ছে অম্ল বা অ্যাসিড ভাবাপন্ন । যোনির মধ‍্যের এই রস হচ্ছে  ল‍্যাক্টক এ্যসিড । এই সময় যোনিপথে সর্বদা ল্যাকটিক এ্যসিড উপস্থিত থাকায়  জনন ইন্দ্রিয় ছোট-খাটো জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাই । যোনির মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে কিছু এপিথেলিয়াল কোষ , আবর্জনা শ্বেত রক্ত কনা ও  কিছু নিরীহ জীবাণু যেমন ল‍্যাক্টব‍্যাসিলাস থাকে । এই ল্যাকটোব্যাসিলাস-এর সাথে যোনি গাত্রে ল্যাকটোজেন-এর  ক্রিয়ার ফলে সেখানে এই ল্যাকটিক অ্যাসিড যুক্ত রসের সৃষ্টি হয় । মেয়েদের যৌবন আগমনের পূর্বে এবং মনোপজ এরপর ভ্যাজাইনাতে এই জীবাণু ও খুব কম দেখা যায় ফলে এই সময় ভ্যাজাইনাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হতে পারে না এবং সেখানে অম্ল রসের অভাব ঘটে ফলে যোনি  শুষ্ক থাকে । মনোপজের পর এই অংশে এস্ট্রোজেনের ঘাটতিও এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী থাকে, তাই এই সময় জননেন্দ্রিয়ের ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে । তবে ঋতুস্রাব চলাকালীন ও প্রসাবের পর কিছুদিন যোনির মধ্যে এই স্বাভাবিক অম্ল রসের অভাব থাকে তাই ওই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাবধানে থাকা উচিত ও যৌনমিলনে এড়িয়ে চলা উচিত । তা না হলে জনন ইন্দ্রিয়ে সহজে ইনফেকশন ঘটতে পারে ।


No comments:

Post a Comment