Saturday 22 May 2021

২/ জরায়ু বা গর্ভাশয় ( Uterus বা Womb )

 ২/ জরায়ু বা গর্ভাশয় ( Uterus বা Womb )

     মহিদের পেলভিস বা বস্তিকোটর  অর্থাৎ তলপেটে অবস্থান করে জরায়ু বা গর্ভাশয় নামক মাংসপেশী  সমৃদ্ধ  স্ত্রী অন্তজননেন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি । জরায়ুর ভেতর টা ফাঁপা ( hollow ) এবং দেখতে অনেকটা ন্যাসপাতি পেঁপে বা ন‍্যাসপাতির মত । অবিবাহিত মহিলাদের জরায়ু শশার মত দেখতে হয় । গর্ভাবস্থায় জরায়ুটি ভ্রুণকে নয় মাস দশ দিন ধারণ করে রাখে । এই জরায়ুর মধ্যেই ভ্রুণ প্রতিপালিত হয় এবং বাড়তে থাকে । জরায়ুর চারপাশের দেয়াল বেশ মোটা পেশি দিয়ে গঠিত হয় । জরায়ুর  বাইরের আবরণটি অর্থাৎ প্রথম স্তরটি পেরিটোনিয়াম পর্দা ( serous membrane )  দিয়ে গঠিত । এরপরে স্তরটি অর্থাৎ মাঝখানের স্তরটি বেশ মোটা মাংসপেশি দিয়ে গঠিত । জরায়ুর এই মাংসপেশির  আবরণ কে বলে myometrium . এবং শেষের স্তর বা একেবারে ভিতরের আবরণটি মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে গঠিত হয় । ভেতরের এই মিউকাস মেমব্রেনের  আবরণকে বলে জরায়ুর অন্তবেস্টক বা এণ্ডোমেট্রিয়াম ( endometrium ) ।


      জরায়ুর উপরিভাগের দুই পাশে থাকে দুটি ডিম্বকোষ বা ওভারি এবং এর উপরিভাগের দুই প্রান্তে থেকে যে দুটি নালী বারিয়েছে তাদেরকে বলে ডিম্ববাহী নালী বা কালল নল ( Fallopian tubes )।

    নিঃসন্তান মহিলাদের বা যাদের একবারও গর্ভ হয়নি তাদের জরায়ুর (সার্ভিক্স সহ ) লম্বায় তিন ইঞ্চির মত  বা সামান্য বেশি হতে পারে এবং চওড়ায় প্রায় দুই ইঞ্চি হয়ে থাকে । আর ওজন হয় সাধারণত 40 থেকে 50 গ্রামের মধ্যে । তবে দুই একবার সন্তান হয়ে যাবার পর জরায়ু প্রায় দ্বিগুণ ভারী হয়ে যায় ও তার গহ্বর আগের চেয়ে আকারে বড় হয়ে যায় । 

       জরায়ুর  উপরিভাগে গোলাকার বলের মতো অংশটি কে বলে তলদেশ বা ফান্ডাস ( Fundus বা Base ) । এটি হচ্ছে জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশ । এরপর থাকে জরায়ুর যে অংশ আরম্ভ হয়েছে তাকে বলে বডি বা দেহ । এটিকে আবার Corpus  বলা হয় । এটি  জরায়ুর মধ্যভাগ অবস্থিত এবং লম্বা প্রায় দুই ইঞ্চি হয়ে থাকে । বডির নিচের অংশ সরু হয়ে নেমে এসে যে অংশের সৃষ্টি করে করেছে তাকে  জরায়ু গ্রীবা  বা Cervix বলে । 

    বর্তমানে অনেকে অবশ্য জরায়ুকে দুই ভাগে ভাগ করে বর্ণনা করে থাকেন । যেমন মেইন বডি বা প্রধান দেহ এবং সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবা । সার্ভিক্স লম্বায় প্রায় এক ইঞ্চির মত হয় । সার্ভিক্স হচ্ছে জরায়ু নিচের অংশ এবং যোনিপথে এসে যুক্ত হয়েছে । বডি এবং সার্বিক এই দুই অংশের সংযোগস্থল একটু সরু হয় । এই অংশকে বলে Isthmus বা যোজক ।জরায়ু গহ্বরে প্রবেশের পথ হচ্ছে, এই সার্ভিক্স এর মধ্যে একটি ছোট ছিদ্র পথ , যাকে বলে জরায়ুর মুখ ।  সারভিক্সের শেষ অংশটুকু থাকে যোনিপথের মধ্যে ,অর্থাৎ বলা যায় যোনি পথের শেষ ভাগ জরায়ুগ্রীবার কিছুটা অংশ বেষ্টন করে থাকে । নিঃ সন্তান অথবা এক সন্তান নারীদের থেকে বহু সন্তানবতী নারীদের জরায়ু গ্ৰীবা এবং জরায়ুর মুখ অনেকটা বড় হায় । সন্তানহীন মহিলাদের সারভিক্সের মুখ সাধারণত ছোট ও গোলাকৃতি হয় । সারভিক্সের এই ছিদ্রপথ এর ভিতরের দিক অর্থাৎ উপরের দিকের মুখ কে  Internal Os বলে । এবং বাইরের দিকের  External Os বা নিচের মুখে বলে । এই External Os যোনির মধ্যে অবস্থিত অর্থাৎ সারভিক্সের বাইরের মুখ যোনি পথে এসে খুলেছে । যোনির মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করলে সারভিক্সের বাইরের মুখ আঙুলের ডগায় অনুভব করা যায় । এছাড়া সার্ভিস এর অংশবিশেষ যাহা যোনিপথের উপরের দিকের প্রান্তে ঝুলে থাকে সেটাও বাইরে থেকে দেখা যায় । ভ্যাজাইনার মত সারভিক্সের অংশও মিউকাস মেমব্রেন দিয়ে ঢাকা থাকে । তবে সারভিক্সের মিউকোসা মসৃণ হয় যেটা যোনির মধ্যে দেখা যায় না । যোনিপথের মিউকোসল লাইনিং, করোগেটেড টিনের মতন ঢেউ খেলানো  হয়েথাকে ।

     জরায়ুর দেওয়াল  মোটা বেশি দিয়ে গঠিত হলেও এই পেশী খুবই সম্প্রসারণশীল । জরায়ু পেশির এই সম্প্রসারণশীল গুণ এর জন্যই গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ুর আকার  ক্রমশ বাড়তে থাকে ও বস্তি গহবর ছড়িয়ে আরো কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে বক্ষস্থল এর নিম্নদেশ পর্যন্ত চলে আসে অর্থাৎ জরায়ুর ফাণ্ডাস বুকের স্টার্নাম হাড়ের জাইফয়েড়  পসেসে গিয়ে স্পর্শ করে । প্রসাবের সময় জরায়ুর পেশি সংকুচিত হয়ে সন্তানকে সামনের সার্ভিস ও যোনিপথের মধ্যে দিয়ে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে । গর্ভ অবসানের পর জরায়ু  আবার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ও আগের স্থানে ফিরে আসে । জরায়ু সংকুচিত হয়ে এইরূপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা কে বলে Uterine involution.

    

     জরায়ুর অবস্থান :-

     বস্তিকোটর বা পেলভিসে জরায়ুর অবস্থান উল্টানো ভাবে থাকে যা, উল্টে রাখা কলসির মত দেখায় । জরায়ুর ফাণ্ডাস বা তলদেশ ওপর দিকে এবং   গ্রীবা এবং মুখ নিচের দিকে থাকে ও যোনি মধ্যে আংশিক ঢুকে থাকে । জরায়ুর ভেতরের গহ্বর ক্ষুদ্র এবং লম্বা ও ফাঁপা ত্রিকোন আকৃতির হয়ে থেকে । জরায়ুর পেছনে দিকে থাকে রেক্টাম এবং সামনের দিকে অবস্থান করে ব্লাডার বা মূত্রথলি । মানে ব্লাডার এবং রেকটামে মাঝে অবস্থিত জরায়ু । তলপেটের মাঝামাঝি স্থানে স‍্যাক্রম হাড়ের ও সমান্তরালে এবং সামনের দিকে ব্লাটারের উপর একটু হেলে জরায়ু অবস্থান করে । স্বাভাবিক অবস্থায় সার্ভিক্স এবং জরায়ুর বডির সংযোগস্থল থেকে জরায়ুর বডি ঝুঁকে তলপেটের সামনের দিকে অবস্থান করে । যার ফলে জরায়ুর ফাণ্ডাস তলপেটের সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং দেহটা কিছুটা মূত্রথলির উপরে ঝুঁকে পড়ে । আর সার্ভিক্সের এক্সটার্নাল অস থাকে পেছনে অবস্থিত রেকটাম ও স‍্যাক্রম অস্থির দিকে । দেখা যাচ্ছে যে জরায়ুর কিছুটা antiversion পজিশনে  (অর্থাৎ সামনের দিকে কিছুটা হেলে থাকে ) বস্তি কোটরে থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থায় । জরায়ু চারপাশ বিভিন্ন ধরনের ফাইব্রাস টিস্যুর বন্ধনী অর্থাৎ লিগামেন্ট দ্বারা আটকানো থাকে যেমন ব্রড লিগামেন্ট, রাউন্ড লিগামেন্ট, ইউটেরোস‍্যক্রাল লিগামেন্ট প্রভৃতি  ৬ রকম লিগামেন্ট দিয়ে জরায়ু বস্তিকোটরে আটকানো থাকে ।

    

    জরায়ুর স্থানচ্যুতি:-

      জরায়ু কতকগুলি পেশী, লিগামেন্ট  প্রভৃতির সাহায্যে পেলভিক এর চারপাশে আটকানো থাকলেও এটি একই স্থানে আবদ্ধ থাকে না । এর   নড়াচড়া দেখা যায়, কারণ এর বাঁধন গুলি খুব দৃঢ় নয় । কোনো কারণে এই বাঁধন গুলি শিথিল হয়ে গেলে বা জরায়ুর কতগুলি রোগের কারণে  বা অন্যান্য নানা কারণে জরায়ুটি অনেক সময় স্থানান্তর ঘটে বা সঠিকভাবে অবস্থান করতে পারে না, একেই  বলা হয় জরায়ুর বিচ‍্যুতি বা স্থানচ‍্যুতি । 

    জরায়ুর স্থানচ্যুতি নানা প্রকারের হয় যেমন এ্যণ্টিফ্লেক্সন ( Anteflexion ), রেট্রোফ্লেক্সান Retroflexion ), রেট্রোভার্সান (Retroversion ),  ও প্রল‍্যান্স (Prolapse of uterus)

      এ্যণ্টিফ্লেক্সন:- এ্যণ্টিফ্লেক্সার এর ক্ষেত্রে  ইউটিরাস সম্পূর্ণভাবে সামনের দিকে বেঁকে  গিয়ে ফাণ্ডাস অংশটি সার্ভিক্সের কাছে চলে আসে । এই অবস্থাটি ঠিক রেট্রোফ্লেক্সানের এর বিপরীত অবস্থা । এই ক্ষেত্রে সাধারণত সার্ভিসের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না । এটি স্বাভাবিক স্থানে থাকে । কেবলমাত্র জরায়ুর বিডিটি তলপেটের সামনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ে ।

    রেট্রোফ্লেক্সান:-  এই ক্ষেত্রেও সার্ভিক্সের অবস্থানের কোনো রকম পরিবর্তন হয় না,  তার মুখ  রেক্টাম ও স‍্যাক্রমের দিকে থাকে তবে এক্ষেত্রে জরায়ু পিছন দিকে বেঁকে যায় অর্থাৎ ফাণ্ডাস সহ দেহটি একেবারে পিছন দিকে বেঁকে গিয়ে ফান্ডাস অংশটি মলনালী ও স‍্যাক্রমে গিয়ে স্পর্শ করে ।

রেট্রোভার্সান :- এইক্ষেত্রে জরায়ু না মুড়ে বা নত না হয়ে  সম্পূর্ণ জরায়ুটি সোজা ভাবে পেছন দিকে হেলে পড়ে মানে ফাণ্ডাস সহ জরায়ু বডিটি সরাসরি মলনালীর গায়ে হেলে অবস্থান করে । এটাই  হচ্ছে এ্যণ্টিভার্সানের ঠিক বিপরীত অবস্থান ।

প্রোল‍্যান্স:- যোনির মধ‍্যে জরায়ুর নেমে আসা বা জরায়ু নীচের দিকে ঝুলে পড়াকে বলা হয় প্রোল‍্যান্স । যোনির মধ‍্যে ইউটিরাসের এই নেমে আসা বেশী বা কম হতে পারে । যেমন ইউরটিরাসের  অংশবিশেষ, অর্ধেকের বেশি অথবা সমগ্রহ জরায়ুটিই যোনিপথে ঝুলে থাকতে পারে । অনেক সময় সম্পূর্ণ জরায়ুটি যনি মূখের বাইরে বেরিয়েনি ঝুলে পড়তে পারে, একে তখন Providential of uterus বলে ।






No comments:

Post a Comment